টানা পতনে নেই ২২ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন
গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরতপন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকল শেয়ারবাজার। টানা এই পতনের কারণে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজার মূলধন হারিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর মধ্যে শুধু গেল সপ্তাহেই হারিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারানোর পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় দেড় শতাংশ এবং লেনদেন সাড়ে ৩৭ শতাংশের ওপরে কমে গেছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল চার লাখ ৮৪ হাজার ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।
আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে আট হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৯ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা তিন সপ্তাহের পতনে ডিএসই ২২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে।
অবশ্য এর আগে টানা ৭ সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। সে হিসেবে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়ার পর ২২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা কমেছে।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১১১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ৭৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। তিন সপ্তাহের এই পতনের আগে টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ১ হাজার ৩৭ পয়েন্ট বাড়ে।
প্রধান মূল্যসূচকরে পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহ পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ১৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৮০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমে ১৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৮ শতাংশ১৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ২৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগে সাত সপ্তাহের টানা উত্থানে সূচকটি বাড়ে ৫৪৬ পয়েন্ট।
ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও টানা তিন সপ্তাহ পতনের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ১৯ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে কমে ১৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১০ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে কমে ২৮ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর আগে টানা পাঁচ সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২০৪ পয়েন্ট।
সবকটি মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৫৭টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৯টির। আর ৮৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৫০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় এক হাজার ২০৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪৫২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে তিন হাজার ৭৫২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ছয় হাজার ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে দুই হাজার ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘এ’ গ্রুপ বা ভালো কোম্পানির অবদান ছিল ৬৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এছাড়া ‘বি’ গ্রুপের ২২ দশমিক ২০ শতাংশ, ‘জেড’ গ্রুপের দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ অবদান ছিল।
গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, রবি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, সামিট পাওয়ার, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল।
এমএএস/এএএইচ/জেআইএম