নগদ সহায়তা পাচ্ছেন করোনায় কর্মহীন ১৭৯৪ দুস্থ শ্রমিক
সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নগদ সহায়তা পাচ্ছেন করোনাভাইরাস মহামারিতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া এক হাজার ৭৯৪ দুঃস্থ শ্রমিক।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শ্রম ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এই নগদ সহায়তা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের জন্য প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৭৯৪ জন দুস্থ শ্রমিক ৩ হাজার টাকা করে পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সিস্টেমে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপকারভোগীর নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সহায়তার টাকা চলে যাবে বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে গত মার্চের পর দেশের গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাত তৈরি পোশাক এবং চামড়া ও পাদুকাশিল্পের অনেক রফতানিমুখী কারখানা লে-অফ এবং উৎপাদন সাময়িকভাবে স্থগিতকরণ বা সীমিতকরণে বাধ্য হয়েছে। ফলে উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, মহামারির প্রকোপে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসায় অনেক শ্রমিককে কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ রফতানিমুখী খাতের দুস্থ শ্রমিকদের জরুরি মানবিক সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সরকার এই সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) ও ফেডারেল জার্মান সরকার অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ফেডারেল জার্মান সরকারের এই যৌথ অর্থায়নে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুস্থ শ্রমিকদের জন্য ইলেকট্রনিক সিস্টেমে জন প্রতি ৩ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আজ দেশে প্রথমবারের মতো সরকারের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পে কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ শ্রমিকদের নগদ ৩ মাসের সাময়িক আর্থিক সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই কার্যক্রমটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে শ্রম অধিদফতর। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক এবং চামড়া ও পাদুকা শিল্পের কারখানা এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থা সম্পৃক্ত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়োজিত কনসালটেন্টের কারিগরি সহায়তায় প্রণীত এমআইএস পদ্ধতিতে কারখানা ও সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠনগুলো সুবিধাভোগীদের তথ্য আপলোড করেছে। শ্রম অধিদফতর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, সরকারের চিফ ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস দফতর, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং বেসরকারি চারটি শিল্প মালিকদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের সক্রিয় সহযোগিতায় যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের ভিত্তিতে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
‘প্রথম ধাপে প্রাপ্ত সংখ্যা যদিও আশানুরূপ নয়, তথাপি সবার সার্বিক সহযোগিতায় সামনের ধাপগুলোতে পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি’ বলেন মন্নুজান।
চারটি শিল্প সেক্টরের কারখানায় যারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ করেছেন কিন্তু এখন কর্মহীন এমন শ্রমিকদের নিজ নিজ কারখানায় গিয়ে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্য আপলোড করার অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ফলে প্রকৃত উপকারভোগীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের গৃহীত এই সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমটি সফল হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য ও জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি বেগম সামসুন নাহার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম জার্মানীর দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার কন্সটানজা জাইরিনজার, শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এবং বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) নেতারা।
আরএমএম/এসজে/এমএস