ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

করোনার ধকল কাটেনি, তবু বেড়েছে মুনাফা

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ১০:২৪ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২০

মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে থমকে দাঁড়িয়েছিল দেশের অর্থনীতি। স্থবির হয়ে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য। অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। ধীরে ধীরে শ্বাসরুদ্ধকর সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে করোনার ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশের সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো।

করোনার কারণে আমদানিতে ভাটা পড়ায় মেরিন প্রিমিয়াম আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে কোম্পানিগুলো। এর সঙ্গে সরকার তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়ায় মোটর বীমা প্রিমিয়াম আয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। সব মিলিয়ে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কমে গেছে।

তবে এরপরও চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ সাধারণ বীমা কোম্পানির মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কমিশনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করায় ব্যবসা কমে যাওয়ার পরও মুনাফায় এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, করোনার কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মেরিন প্রিমিয়াম (আমদানির বিপরীতে করা বীমার প্রিমিয়াম) আয় প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। এখনো এই অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। এর সঙ্গে যানবাহনের তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কমে গেছে।

ব্যবসা কমার পরও মুনাফা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আগে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোতে বীমা পলিসির বিপরীতে কমিশন দেয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। কোনো কোনো কোম্পানি গ্রাহকদের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিত। তবে চলতি বছর থেকে আইডিআরএ’র কঠোর পদক্ষেপের কারণে কমিশন নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ হয়েছে। কেউ নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্ধারিত ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দিচ্ছে না। যার ফলে বীমা পলিসি বিক্রি কমলেও কোম্পানির মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি সাধারণ বীমা কোম্পানির মধ্যে ৩৪টি কোম্পানি চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে ২৬টির। বিপরীতে মুনাফা কমেছে ৮টির। অথচ তিন মাস আগে অর্থাৎ জুন পর্যন্ত ১৮টি কোম্পানির মুনাফা গত বছরের তুলনায় কম ছিল।

শেষ তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ভালো মুনাফা করার বিষয়ে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারিকুল রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়ার মূল কারণ ১৫ শতাংশ কমিশন বাস্তবায়ন করা। আগে বিভিন্ন কোম্পানি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিত। আইডিআরএ কঠোর হওয়ার কারণে এখন এটা বন্ধ হয়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুনাফায়।

তিনি বলেন, মুনাফা বাড়লেও করোনার কারণে সাধারণ বীমা কোম্পানির ব্যবসায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, তার উন্নতি হয়নি। কবে এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। করোনার কারণে আমদানি না থাকায় মেরিন ইনস্যুরেন্স থেকে এখন তেমন প্রিমিয়াম আয় হচ্ছে না। আবার যানবাহনের তৃতীয় পক্ষের বীমা তুলে দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে আমাদের ব্যবসা বড় অঙ্কে কমে গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরাবরের মতো চলতি বছরে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়েও মুনাফায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে মুনাফা করেছে ৬ টাকা ১ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ৪৭ পয়সা। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে ২ টাকা ৫৪ পয়সা বা ৭৩ শতাংশ।

মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর—এই নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৪ টাকা ১৪ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ৪৯ পয়সা। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে ৬৫ পয়সা বা ১৯ শতাংশ।

মুনাফা বাড়া কোম্পানিগুলোর চিত্র

কোম্পানির নাম

শেয়ারপ্রতি মুনাফা

শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য

শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো

২০২০ জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর

২০১৯

জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর

২০২০

সেপ্টেম্বর

২০১৯

ডিসেম্বর

২০২০ জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর

২০১৯

জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর

এশিয়া ইন্স্যুরেন্স

২.৬৯

১.৩৮

২২.০৮

১৯.৩৫

৪.৮৮

২.৭১

এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স

২.০১

১.৯৩

২০.৬৮

২০.৪৫

২.৪৫

২.৩৮

বিজিআইসি

১.২০

১.০০

১৯.০১

১৯.৬৯

৩.৫৬

২.৯২

বাংলাদেশ ন্যাশনাল

১.৫৫

১.৩৭

১৯.৪০

১৯.০৫

৪.১০

.৪৪

ঢাকা ইন্স্যুরেন্স

১.৯০

১.৫৪

৩০.৫৮

৩০.১৩

১.৭৮

.৯৪

ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স

২.৫১

২.১৫

৪৫.৩০

৪৪.৫৪

২.৮২

২.৮০

ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স

.৫৮

.৫৪

১২.১৫

১১.৫৭

১.৩৬

.৪০

গ্লোবাল

১.০৬

.৬২

১৩.৩৩

১১.৮৯

২.৯০

১.৩৫

গ্রিন ডেল্টা

৩.৫৩

২.০৫

৬৮.৩৫

৬৮.৩৩

৫.২৩

১.২৮

ইসলামী ইন্স্যুরেন্স

১.৪১

১.১৫

১৬.২৫

১৪.৮৫

৪.০৪

১.৭৯

জনতা ইন্স্যুরেন্স

১.১১

.৭৫

১৫.৩২

১৪.২২

২.১৯

.৭৯

কর্ণফুলী

.৮৯

.৮২

১৮.১১

১৭.৯৩

৩.১৮

.৩২

মার্কেন্টাইল

১.১৫

.৯৩

১৯.৪৫

১৮.২৭

.৫৫

.৪০

নিটল

২.১০

২.০৮

২৬.৪৯

২৪.৭৫

১.০৫

২.২৪

প্যারামাউন্ট

৩.৫৩

১.০৩

২৫.১০

১৩.৫৫

১.৬৭

.১৬

পিপলস

১.৬৮

১.০৬

২৮.৮৩

২৬.৩৪

১.৮৬

১.০৫

পাইওনিয়ার

৬.০১

৩.৪৭

৪৭.৯৯

৪৪.০৯

৩.৮৯

৫.০৪

প্রগতি

২.৯৮

২.৩৩

৫১.৫৩

৫০.৬৩

৫.৫৩

১.৪৩

প্রাইম ইন্স্যুরেন্স

১.১০

.৪৪

১৭.৪১

১৬.৩১

৬.৩৫

৮.৭৬

প্রভাতী

১.৬৭

১.৪৭

২০.৭৭

১৮.০৩

৪.৮২

১.০২

পূরবী জেনারেল

.৯২

.৭৫

১৩.০১

১২.৬২

১.৩৬

.২২

রিলায়েন্স

৪.১৪

৩.৪৯

৫৭.২৯

৫২.৬০

৫.৬৮

৫.৩১

রিপাবলিক

     

 

   

রূপালী

১.৪৬

১.৪৫

২১.১৮

২১.০৬

.৯২

.৬৮

সোনার বাংলা

১.৮৬

১.৭০

২০.২৮

১৮.৫৬

৩.৬৮

১.৬১

তাকাফুল

১.১২

.৯৪

১৮.৩৪

১৭.২৩

১.২৯

.৮৮

ইউনাইটেড

১.৬০

১.২৩

৩৪.২৯

৩১.৮৭

১.৬৮

(.৩৭)

বেশিরভাগ কোম্পানির মুনাফা বাড়ার বিষয়ে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও মো. খালেদ মামুন জাগো নিউজকে বলেন, করোনার পর সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বাড়েনি। করোনার কারণে ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এখনো সেই অবস্থা রয়েছে। নতুন ব্যবসা খুব একটা আসছে না। মোটর ইন্স্যুরেন্স একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের মোটর ইন্স্যুরেন্স ৩০-৩২ শতাংশ চলে গেছে। ২০-৩০ শতাংশ মেরিন ইন্স্যুরেন্স কমে গেছে।

তিনি বলেন, করোনার যে প্রভাব তা এখনো রয়ে গেছে। এরপরও বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির মুনাফা বাড়ার যৌক্তিকতা আমি দেখি না। মুনাফার এই গ্রোথ প্রশ্নসাপেক্ষ। হয়তো মুনাফা বাড়তে পারে। যে কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে, সেই কোম্পানিই ভালো বলতে পারবে কেনো এবং কী কারণে মুনাফা বেড়েছে।

আপনাদের কোম্পানির মুনাফাও তো বেড়েছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানির বরাবরই মুনাফা বাড়তি। আমরা কমিশনের বিষয়ে আইডিআরএ’র দেয়া নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলি। এ কারণে আমাদের ব্যবসার গ্রোথ হয় তো বাড়েনি, তবে মুনাফা বেড়েছে। অবশ্য আমরা শুনছি—অনেক কোম্পানি এখনো নানা ফন্দিফিকির করে কমিশনের ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করছে।

এদিকে বেশিরভাগ কোম্পানির মুনাফা গত বছরের তুলনায় বাড়লেও ৮টি কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স এবং স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। এ কোম্পানিগুলোর মুনাফা চলতি বছরের অর্ধবার্ষিক (জানুয়ারি-জুন) হিসাবে কমেছিল।

মুনাফা কমে যাওয়া কোম্পানিগুলোর চিত্র

কোম্পানির নাম

শেয়ারপ্রতি মুনাফা

শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য

শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো

২০০ জানুয়ারি-জুন

২০১৯

জানুয়ারি-জুন

২০২০

জুন

২০১৯

জুন

২০২০ জানুয়ারি-মার্চ

২০১৯

জানুয়ারি-মার্চ

অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স

.৬২

১.২৪

১৮.০১

১৭.৩৯

১.৫৩

.০৯

সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স

১.৭২

১.৭৭

২৪.৫৬

২৪.৬৮

১.৮৪

১.৫৬

সিটি জেনারেল

.৭৫

.৯৩

১৬.৮০

১৫.৬৮

.২৭

.০৬

কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স

১.৩৮

১.৯৭

১৯.৭০

১৯.৮৯

.৫০

২.২১

ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স

.৯৩

১.২৫

২০.৯৬

২০.৮৬

.৩৭

.৪৩

নর্দান ইসলামী

১.৪২

১.৪৭

২০.৯১

১৯.২৪

৬.৯৬

১.৪১

ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স

১.৪৬

১.৭২

৩৯.২৯

৩৫.৩৭

১.০৯

১.৪৩

স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স

১.৮৫

১.৯৮

১৮.৮৭

১৮.০২

২.৯৫

১.৩৩

মুনাফা কমে যাওয়ার বিষয়ে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের সিইও মো. জাহিদ আনোয়ার খান জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে এপ্রিল-জুন সময়ে আমাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। এখনো সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। এখনো আমরা টিকে থাকতে রীতিমতো যুদ্ধ করছি। আমদানি কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আমাদের আয় কমেছে। আবার তৃতীয়পক্ষের বীমা তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে মোটর বীমাও বড় অঙ্কে কমে গেছে। সার্বিকভাবে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কমে গেছে। এ কারণেই মুনাফা কমেছে।

এমএএস/এএএইচ/এইচএ/জেআইএম