৫১ হাজার কোটি টাকা উধাও : পথে বসছে বিনিয়োগকারীরা
বেশ কয়েক মাস ধরে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। এই বাজারে খরা কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছে না। ধারাবাহিক পতনে সূচক লেনদেনের পাশাপাশি হ্রাস পেয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সম্মিলিত বাজার মূলধন হারিয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকা। চলমান এ পরিস্থিতিতে পুঁজি হারিয়ে আবারো পথে বসতে চলেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ার বাজার একটা স্পর্শকাতর বাজার। দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটলেই তা পুঁজিবাজারের ওপর প্রভাব ফেলে।
দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব, স্থায়ী বিনিয়োগ না হওয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সম্পূর্ণ নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে লেনদেন ও বাজার মূলধন কমেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও ব্যাংকের এক্সপ্রোজাল লিমিট বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় দরপতনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করছে বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৩ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এসময় দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সম্মিলিত ৫১ হাজার ৬৫১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বাজার মূলধন কমেছে। এর মধ্যে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কমেছে ২৬ হাজার ৩৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) হারিয়েছে ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৫ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। যা তিন মাসের ব্যবধানে ২৬ হাজার ৩৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা কমে ৫ নভেম্বর নেমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায়।
এদিকে, আলোচিত সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চার হাজার ৮৭৩ থেকে ৩৭১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৫০২ পয়েন্টে অব্স্থান করছে।
দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ৫ আগস্ট বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিলো ২ লাখ ৭২ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। ৫ নভেম্বর তা নেমে এসেছে দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকায়। এদিকে আলোচিত সময়ে সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএসইএক্স ৯ হাজার ১০৩ পয়েন্ট থেকে ৭৩৬ পয়েন্ট কমে ৮ হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে অব্স্থান করছে।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন করণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও প্রায় নিষ্ক্রিয় রয়েছে। ফলে সূচকের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর। নতুন করে বিনিয়োগকারী আসছে না। আবার যারা বাজারে আছে তারাও আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই বাজার মূলধনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাজারে কারসাজির জন্য একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে মির্জা আজিজুল বলেন, বর্তমানে পারিপার্শ্বিক এমন কোনো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি যে ধারাবাহিকভাবে দরপতন হবে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে খতিয়ে দেখতে হবে।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিশোধের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বাজারে লোকসান দিচ্ছি। বাজার থেকে দিন দিন কোটি কোটি টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এসআই/একে/পিআর