যে কারণে আটকে গেল স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি
ফাইজার এবং বায়োএনটেক কোম্পানির উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ৯০ শতাংশ সাফল্য দেখিয়েছে এমন খবর আসায় গত সোমবার বিশ্ববাজারে বড় ধরনের দরপতনের মধ্যে পড়েছে স্বর্ণ। একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৯৪ ডলার কমে যায়। বিশ্ববাজারে এমন দরপতনের কারণে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ার উদ্যোগ নিয়েও পিছু হটে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এ বিষয়ে বাজুসের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে বিশ্ববাজারের ওপর। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও দাম বাড়ানো হয়। একইভাবে বিশ্ববাজারে কমলে দেশেও দাম কমে। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় ধরনের উত্থান হয়। এ কারণে দেশেও দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সোমবার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। এ পতনের কারণেই স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বাজুস।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৮৭৮ ডলার। দফায় দফায় বেড়ে সপ্তাহ শেষে প্রতি আউন্সের দাম উঠেছে ১৯৫১ দশমিক ৭০ ডলারে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৭৩ ডলার বা ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মাধ্যমে দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এমন দাম বাড়ার মধ্যেই খবর আসে ফাইজার এবং বায়োএনটেক কোম্পানির উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ৯০ শতাংশ সাফল্য দেখিয়েছে। এরপর গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার বিশ্ববাজারে লেনদেন শুরু হতেই বড় পতনের মধ্যে পড়ে স্বর্ণ। দফায় দফায় দাম কমে ১৯৫১ ডলার থেকে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৫৭ ডলারে নেমে আসে। অর্থাৎ একদিনে আউন্স প্রতি স্বর্ণের দাম কমে ৯৪ ডলার। চলতি বছরের ১১ আগস্টের পর এটি একদিনে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দরপতন। ১১ আগস্ট বিশ্ববাজারে একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়।
এদিকে, সোমবারের বড় দরপতনের পর গত সপ্তাহের বাকি চার কার্যদিবসে স্বর্ণের দাম কিছুটা বেড়েছে। সোমবারের দরপতনের তুলনায় সেই দাম বাড়ার হার খুবই কম। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৩ দশমিক ১৯ ডলার বেড়ে ১৮৮৮ দশমিক ৯৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর পরও সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, যা দুই মাসের মধ্যে এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ দরপতন।
বিশ্বাবাজারে বড় দরপতনের মধ্যে পড়লে গত সোমবার বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে বিশ্বাবাজারের ওপর। বিশ্বাবাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লে আমরা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। একইভাবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমলে আমরাও কমানোর সিদ্ধান্ত নেই। এবারও আমরা বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
বাজুসের এক সদস্য বলেন, বিশ্ববাজারে বর্তমানে যে দাম রয়েছে, এই দামের বড় পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশে স্বর্ণর দাম কম-বেশি হবে না। এমনকি ১০-২০ ডলার এদিক ও দিক হলেও দাম বাড়া বা কমার সম্ভাবনা কম।
বাংলাদেশে সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর স্বর্ণর দাম সমন্বয় করা হয়। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে সে সময় ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ৩৪১ টাকা। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭৩ হাজার ১৯২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৪ হাজার ৪৪৪ ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এমএএস/এসএস/পিআর