ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

প্রাইম ব্যাংক থেকে ছাঁটাই হলেন ক্যান্সার আক্রান্ত কর্মীও!

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:৫৬ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২০

করোনাকালীন ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করেছে বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক। বিভিন্ন অজুহাতে অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের নানামুখী চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী রাহেল আহমেদের বিরুদ্ধে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরাসরি চাকরি থেকে অব্যাহতি না দিলেও অনেককে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি এমন অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ব্যাংকটির ইভিপি জুবায়ের এরশাদ। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহেল আহমেদকে। চাকরি ছাড়ার আগে জুবায়ের এরশাদ কনজ্যুমার ব্যাংকিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন। করোনাকালীন চাকরি হারিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত জুবায়ের। তার ওপর বাড়ি নির্মাণের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধে চাপ দিচ্ছে প্রাইম ব্যাংক। এই চাপ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দুই পাতার একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন তিনি।

জুবায়ের এরশাদ বলেন, ‘একটি মানুষের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রাইম ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তিনি তার পছন্দের লোকদের বিভিন্ন জায়গায় বসাতে পুরনোদের জোর করে বের করে দিচ্ছেন। আমিও তার প্রতিহিংসার শিকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। তারপরও ব্যাংকের কাজে কোনো সময় অবহেলা করিনি। আমার কনজ্যুমার ক্রেডিট ডিভিশনে দায়িত্ব ছিল, আমি সবসময় সফল হয়েছি। তারপরও আমি প্রতিহিংসার শিকার। মহামারি করোনাকালে চাকরি হারিয়ে বেকার বসে আছি। এখন আমি অসহায়। এর মধ্যে বাড়ি নির্মাণের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যাংকের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। আমি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী, তাই দুই বছরের বেতন দাবি করছি।’

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে চাকরি করছেন প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) আফজাল হোসেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে হঠাৎ ফোন করে পদত্যাগ করতে বলা হয় তাকে। কোনো কারণ ছাড়াই পদত্যাগে বাধ্য হন আফজাল হোসেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যাংকে চাকরির বয়স ২৯ বছর। এর মধ্যে ২৫ বছর প্রাইম ব্যাংকে কাজ করলাম। এখন অবসরে যাওয়ার সময়। কোনো কারণ ছাড়া পদত্যাগ করতে হলো। আমাকে কোনো সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হয়নি।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে আফজাল হোসেন আরও বলেন, ‘এত বছর কাজ করলাম আরলি রিটায়ারমেন্ট বেনিফিটও পাইনি। এ কথা বলে লাভ কী? ওদের সঙ্গে আমরা পারব না। অনেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাদের ক্ষমতা অনেক উপরে।’

স্বেচ্ছায় পদত্যাগে বাধ্য হওয়া মেজর (অব.) সাইদ আল-আমীন বলেন, ‘এমডি সবসময় ব্যাংকের চেয়ে তার ব্যক্তিস্বার্থ বেশি দেখছেন। কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে কোণঠাসা করে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ব্যাংক চালাচ্ছেন। যাদের পছন্দ হয় না, তাদের বিভিন্নভাবে মানসিক চাপ দিয়ে ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যাংকের ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের (এফএমডি) জিনিসপত্র ক্রয় ও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতাম। হঠাৎ এমডি বলেন, তার এক লোককে কাজ দিতে হবে। লিমিটেড কোম্পানিতে কেনাকাটর জন্য একটা প্রক্রিয়া মেইনটেইন করতে হয়। একটা পণ্য ১০ টাকা দাম, এটা তো ১৫ টাকায় কিনতে পারি না। কিনলে অডিট আমাকে ধরবে। কিন্তু এমডি বললেন, ১৫ টাকা দরে তার পছন্দের লোকের কাছ থেকে কিনতে হবে। এটা দেইনি বলে আমার ওপর তিনি বিরক্ত। আমাকে চাকরি ছাড়তে বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করেন। আমি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে এসেছি। এটা নিয়েও এমডিসহ তার লোকজন বিভিন্ন বাজে মন্তব্য করেন। পরে আমি বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দেই।’

মহামারি করোনার মধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফার্স্ট অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এফএভিপি) মোহাম্মদ দেলোয়ার। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাংকের শাখা থেকে পরিচালনা পর্ষদ, সব জায়গায় কাজ করেছি। ২৪ বছরের কর্মজীবনে আমাকে কেউ ব্যর্থ বলেনি। গত জানুয়ারিতে হঠাৎ এইচআর থেকে ডেকে আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। আমি কেন পদত্যাগ করব, জানতে চাই। কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে এইচআর থেকে বলা হয়, উপরের নির্দেশ। আমাকে দুদিনের সময় দেয়া হয়। কিন্তু আমি পদত্যাগ করিনি। পদত্যাগ না করলে ব্যাংকের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেবে না বলে হুমকি দেয়। পরে মহামারির মধ্যে জুলাইয়ে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করি। আমার মতো অনেকে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। এখন আমার একটাই দাবি, চাকরি ফেরত চাই।’

এদিকে এমডি ও তার লোকজনের স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যাংকের কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক কর্মকর্তা। চাকরি হারানোর ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখও খুলছেন না। চাপা ক্ষোভ নিয়ে অনেকে কাজ করছেন। যারা অন্য জায়গায় চাকরি পাচ্ছেন, তারা চলে যাচ্ছেন।

ব্যাংকটির মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ কর্মী ব্যাংক থেকে চলে গেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আরও অনেক কর্মী চলে যাবেন। ব্যাংকটি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। তাই ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে কাজ কারার সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান কর্মীরা।

এসব বিষয়ে জানতে প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহেল আহমেদকে মোবাইলে ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠালে ব্যাংকের গণসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, এমডি মিটিংয়ে ব্যস্ত। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন।

এসআই/এমএসএইচ/এমএআর/জেআইএম