৮ কার্যদিবস পর ওয়ালটনের শেয়ার বিক্রির চাপ
টানা আট কার্যদিবস দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে হল্টেড হওয়ার পর সোমবার ওয়ালটনের শেয়ার বিক্রির এক ধরনের চাপ এসেছে। আগের আট কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে না চাইলেও আজ প্রথম দুই ঘণ্টার লেনদেনেই কোম্পানিটির শেয়ার প্রায় অর্ধকোটি টাকা লেনদেন হয়ে গেছে।
শেয়ার বিক্রির এক ধরনের চাপ এলেও আগের আট কার্যদিবসের মতো আজও কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে। তবে আগের আট কার্যদিবসের মতো দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে হল্টেড হয়নি।
এদিন ওয়ালটনের শেয়ারের শুরুর দাম ছিল ৯৪০ টাকা ৪০ পয়সা। তবে লেনদেনের শুরুতে প্রথমে ৯১৬ টাকা করে ওয়ালটনের ১২১টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। কয়েক দফা দাম বাড়িয়ে ক্রেতারা সর্বোচ্চ ৯১৯ টাকা ৮০ পয়সা করে শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই দামেই সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অপরদিকে যাদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার আছে তাদের পক্ষ থেকে সর্বশেষ ৯২০ টাকা করে ৪০টি শেয়ার বিক্রির আগ্রহ দেখানো হয়েছে। অবশ্য শুরুর দিকে ৯২৭ টাকা করে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে শেয়ার বিক্রির আগ্রহ দেখানো হয়। তবে এ দামে ক্রেতা না পাওয়ায় কয়েক দফায় দাম কমে ৯২৬, ৯২৫, ৯২৪, ৯২৩, ৯২২ এবং ৯২০ টাকা করে বিক্রির আগ্রহ দেখানো হয়েছে।
এদিকে ক্রেতাদের আগ্রহ ও বিক্রেতাদের চাপ থাকায় দুপুর ১২টার মধ্যে ওয়ালটনের শেয়ার ৪৩ কোটি ৩১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লেনদেন হয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন ৮৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯৪০ টাকা ৪০ পয়সা করে চার লাখ ৬৮ হাজার সাটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ হাজার ৪৯৮ বারে এসব শেয়ার লেনদেন হয়।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে ওয়ালটনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরুর পর রোববার পর্যন্ত টানা আট কার্যদিবস দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে হল্টেড হয়। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এর আগে কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে লেনদেনের প্রথম আট কার্যদিবস টানা হল্টেড হয়নি।
ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ মেটাতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য গত ৭ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে বিডিংয়ে অংশ নেয়ার অনুমোদন দেয়।
এ অনুমোদনের ফলে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে গত ২ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে ৫ মার্চ বিকেল ৫টা পর্যন্ত যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ে অংশ নেন। এ সময়ের মধ্যে বিডিংয়ে অংশ নেন ২৩৩ জন। এসব বিনিয়োগকারী সর্বনিম্ন ১২ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৬৫ টাকা করে ওয়ালেটনের শেয়ার কেনার জন্য প্রস্তাব দেন।
এর মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক যোগ্য বিনিয়োগকারী ওয়ালটনের প্রতিটি শেয়ারের জন্য ২১০ টাকা দাম প্রস্তাব করেন। এই দামে ১৪ জন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বিনিয়োগকারী দাম প্রস্তাব করেন ১৫০ টাকা করে। এই দামে ১০ জন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখান।
তবে বিডিংয়ে বরাদ্দকৃত ৬০ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ারের জন্য ৩১৫ টাকার ওপরে বিডিং হয়। ফলে কাট-অফ প্রাইস হিসেবে ৩১৫ টাকা নির্ধারিত হয়। এর ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬টি সাধারণ শেয়ার ২৫২ টাকা মূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীর (অনিবাসী বাংলাদেশিসহ) নিকট বিক্রি করে।
এই সীমিতসংখ্যক শেয়ার নিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় ওয়ালটনের শেয়ার। প্রথম দিনেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় দিনেও শেয়ার দাম বাড়ে ৫০ শতাংশ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, লেনদেনের প্রথম দুদিন কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ওয়ালটনের শেয়ার প্রথম দুদিনেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সেই সীমা স্পর্শ করে।
এরপর থেকে ওয়ালটনের শেয়ার দাম বাড়া বা কমার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া হয় সাড়ে সাত শতাংশ। এ নিয়মেই ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওয়ালটনের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে। প্রথম দুই কার্যদিবসের মতো পরের ছয় কার্যদিবসেও ওয়ালটনের শেয়ার দাম সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। তবে আজ প্রথম দুই ঘণ্টার লেনদেনে দাম বেড়েছে পাঁচ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এমএএস/বিএ/এমকেএইচ