পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক তুলে নিল সরকার
পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ নিত্যপণ্যের আমদানিতে আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এটা কার্যকর থাকবে।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ আংশিক আমদানিনির্ভর একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। নিকট অতীতে এই পণ্যটির বাজার বেশ কয়েকবার অস্থিতিশীল হয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছর এই সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পণ্যটির মূল্য সম্প্রতি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত আমদানি মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া এর অন্যতম কারণ।
নিকট অতীতেও পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই সংকটটি কঠিন আকার ধারণ করে। পেঁয়াজের মূল্য সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধের কারণে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশীয় পেঁয়াজ চাষিদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ প্রদান এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের লক্ষ্যে পেঁয়াজ আমদানিতে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্কারোপ করা হয়। বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পেঁয়াজের অনুৎপাদনকালীন সময় (Lean Period) হিসেবে পরিচিত মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত পেঁয়াজের ওপর আরোপিত এ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পেঁয়াজ আমদানির ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এদিকে চলতি মাসে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে দেশে পেঁয়াজের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়। ঢাকাসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ দেশব্যাপী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা করে বিক্রি করছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বাজারে পেঁয়াজের মূল্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পেঁয়াজ বিক্রির এ কার্যক্রম আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ট্রাকের পাশাপাশি অনলাইনেও পাওয়া যাবে টিসিবির পেঁয়াজ। বিক্রি হবে ৩৬ টাকা কেজিতে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। এ কার্যক্রম আজ রোববার উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করা হলে সরকার প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে এবং সরকারের নানা উদ্যোগে দফায় দফায় পাইকারি বাজারে কমছে পেঁয়াজের দাম। তিনদিনে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ২৫ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ আড়তে পৌঁছালে দাম আরও কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, হুট করে ভারত রফতানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ফলে পাইকারিতে বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামে। স্টোর বোঝাই পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতারা বসে থাকছেন কিন্তু ক্রেতা আসছে না।
তারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার আগে রফতানির অনুমতি পাওয়া ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশকে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারত। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালের মধ্যে এসব পেঁয়াজ শ্যামবাজারে পৌঁছাতে পারে। আড়তে পৌঁছালে দাম আরও কমবে।
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে পেঁয়াজের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা, যা গতকাল ছিল ৭০-৭২ টাকা। তার আগের দিন ছিল ৭৭ টাকা। ভারত রফতানি বন্ধ করায় এ পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৬০-৬৫ টাকা।
আজ পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে নতুন করে কমেনি। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গতকালের মতো দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা।
এর আগে গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) হুট করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। ফলে মঙ্গলবার ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে বেড়ে ১১০ টাকা হয়। পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে পেঁয়াজের কেজি হয় ৮৫ টাকা। কোনো কোনো পাইকার ৯০ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ বিক্রি করেন। এমন দাম বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে ক্রেতাদের।
এমইউএইচ/এফআর/পিআর