ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

সরকারি টাকায় যথেচ্ছ বিদেশ ভ্রমণ নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:০৪ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২০

>> ভ্রমণ বাবদ বছরে ব্যয় দুই হাজার কোটি টাকা
>> চলতি অর্থবছর রুটিন ভ্রমণ পরিহারের নির্দেশ
>> অপরিহার্য ক্ষেত্রে ভ্রমণ ব্যয় দেয়া হবে অর্ধেক

সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রতি অর্থবছর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় দুই হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ অনেক সময় অনেক প্রতিষ্ঠান যৌক্তিকভাবে খরচ করতে পারে না। সেজন্য কোনো এক ছুতোয় সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করেন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু চলতি (২০২০-২১) অর্থবছর সেটি আর হচ্ছে না। কারণ সরকার এ অর্থবছর রুটিন ভ্রমণ পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে অপরিহার্য ক্ষেত্রেও সব ধরনের (দেশ-বিদেশ) ভ্রমণ ব্যয় অর্ধেক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে রোববার (১৯ জুলাই) একটি পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে থমকে গেছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। এর থাবায় দেশের রাজস্ব আহরণেও বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিপরীতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যয় বেড়ে গেছে সরকারের। সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নতুন গাড়ি কেনায় সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছর বাস্তবায়নাধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নিম্ন অগ্রাধিকার বা কম গুরুত্বপূর্ণ এবং মধ্যম অগ্রাধিকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ বন্ধেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ধারাবাহিকতায় এবার রুটিন বিদেশ ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো।

এ সংক্রান্ত পরিপত্রটিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতসমূহে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে ভ্রমণ ব্যয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে সরকার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- শুধু জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্র বিবেচনায় ভ্রমণখাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা যাবে, তবে সরকারি ভ্রমণের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ বরাদ্দ স্থগিত থাকবে। অর্থাৎ অর্ধেক ব্যয় দেয়া হবে। পাশাপাশি সকল প্রকার রুটিন ভ্রমণ পরিহার করতে হবে।’

এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয় পরিপত্রে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, রাজস্ব আদায়ের বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে (সংশোধিত) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম আহরিত হবে বলে জানা গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটছে সরকার।

তিনি আরও বলেন, সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ বাবদ বরাদ্দ একত্র করে দেখা গেছে, এর পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে প্রায় অর্ধেক বা তারও বেশি অর্থাৎ এক হাজার কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে রাজস্ব আদায়ের নাজুক পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট দুই লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এ সময়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় হয়েছে প্রায় ৭৬ হাজার ২৫১ কোটি টাকা কম।

এমইউএইচ/এইচএ/এমএস