ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় মহামারির থাবা

প্রকাশিত: ১০:৪৫ পিএম, ০১ জুলাই ২০২০

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে থমকে আছে অর্থনীতি। যার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংক খাতে। বছরের প্রথম ষান্মাসিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কমেছে পরিচালন মুনাফা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে থেকেই খেলাপি ঋণের চাপ, তারল্য সংকট, এর ওপর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবনতির হওয়ায় পরিচালন মুনাফা কমে গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার বিস্তাররোধে লকডাউনের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম হচ্ছে না। ব্যাংকের ঋণ আদায় প্রায় বন্ধ। এ অবস্থায় এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের সুদকে আয় হিসাবে না দেখিয়ে 'ব্লকড হিসাবে' রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোর আয় কমে গেছে।

অন্যদিকে এপ্রিল থেকে সব ঋণের সুদ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর সুদের আয় প্রায় ২৫ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর বড় একটা আয় আসছে বৈশ্বিক বাণিজ্য তথা আমদানি-রফতানি থেকে। কিন্তু মহামারিতে গত তিন মাস ধরে এ খাতের আয় প্রায় বন্ধ। যার কারণে ব্যাংকগুলোর ব্যয় বাড়লেও আয় হচ্ছে না। এসব কারণে ব্যাংকের মুনাফা কমেছে।

বুধবার (১ জুলাই) ছিল ব্যাংক হলিডে। এদিন ব্যাংকগুলোর তাদের বিভিন্ন শাখা থেকে পাঠানো হিসাব একত্র করে অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই-একটি ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে।

জানা গেছে, দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। প্রান্তিক (তিন মাস) ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো তাদের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জমা দেয়।

এর আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে হয়। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সেই তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। নিয়ম অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জে জমার দেয়ার আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য জানাতে করতে পারবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমে গেছে।

যেসব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে এর মধ্যে- বেসরকারি এক্সিম ব্যাংক ২০২০ সালের প্রথম ষান্মাসিকে (জানুয়ারি-জুন) পরিচালন মুনাফা করেছে ৩১৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৩০ কোটি টাকা। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক প্রথম ষান্মাসিকে ৭০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, এর আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকের মুনাফা ছিল ৯০ কোটি টাকা। আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩০৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সমেয় ছিল ছিল ৪০০ কোটি টাকা। প্রথম ছয় মাসে এনসিসি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা; আগের বছর ছিল ৩৬২ কোটি টাকা। এ সময়ে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৭৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৭৮ কোটি টাকা।

সাউথইস্ট ব্যাংকের এ বছর পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৪২ কোটি টাকা যা আগের বছর ছিল ৫০৫ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৪৩ কোটি টাকা যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩৩১ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মুনাফা করেছে ২৮০ কোটি টাকা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩১০ কোটি টাকা। ষান্মাসিকে মিডল্যান্ড ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫২ কোটি। গত বছরের এই সময়ে তাদের মুনাফা ছিল ৬৫ কোটি টাকা। এনআরবিসি ব্যাংকের মুনাফা সামান্য বেড়েছে। প্রথম ষান্মাসিকে ৯০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮৯ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে মধুমতি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। যা আগের বছরে ছিল ৯৮ কোটি। প্রথম ছয় মাসে মেঘনা ব্যাংক মাত্র ১২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। আগের বছর একই সময় ছিল ৪৫ কোটি টাকা।

বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমলেও কয়েকটি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। ষান্মাসিকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অগ্রণী ব্যাংক ৫৩১ কোটি টাকার মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩১৯ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৩০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৫ কোটি টাকা। এ বছর পূবালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫০৪ কোটি টাকা। আগের বছরে ব্যাংকের এই মুনাফা ছিল ৫৪০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস উল ইসলাম বলেন, আমরা আয় বাড়ানোর যতগুলো পথ আছে সবগুলোতেই জোর দিয়েছি। ইন্টারেস্ট, নন ইন্টারেস্ট, ট্রেজারি কার্যক্রম, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, সিন্ডিকেশন ঋণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্স সবগুলোতেই আমাদের পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে। এছাড়া বিশেষ ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালার আওতায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে আমাদের বড় ধরনের আদায় হয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, এবার ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার বড় অংশই এসেছে কমিশন, সার্ভিসচার্জ, আমদানি আয় থেকে। ব্যাংকের আয়ের প্রধান খাত সুদ হলেও এবার এই খাত থেকে আদায় হয়েছে খুবই কম। এর মূল কারণ এপ্রিল থেকে সব ঋণের সুদ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া। যে কারণে মুনাফার অঙ্ক প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। এছাড়া তারল্য সংকটের করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর ঋণ বিতরণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হয়নি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুনাফায়।

উল্লেখ্য, পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব হবে। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা। নানা উপায়ে ব্যাংকগুলো ভালো পরিচালন মুনাফা দেখালেও সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনামূলক চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে প্রকৃত মুনাফা খুব ভালো অবস্থায় নেই।

এসআই/বিএ