করোনাকালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিনিয়োগ লাভজনক হবে
কোভিড-১৯ সংকটে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি উভয় দেশের কল্যাণ নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় বলে মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) এফবিসিসিআই থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সোমবার রাতে এফআইসিসিআই আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট: স্টেকহোল্ডার্স ইন্টের্যাকশন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ওয়েবিনারের প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাশ।
ফজলে ফাহিম বলেন, ‘এই সংকটের সময়ে এসে আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ৯ বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ বাস্তবতার কারণে, অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য যৌথ বিনিয়োগ, যেসব পণ্য ও সেবার কাঁচামাল ভারত থেকে এসে বাংলাদেশে পণ্য প্রস্তুত হয়ে পুনরায় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে সেসব পণ্য ও সেবার ভ্যালু চেইনেরই একটি অংশ। যার ফলে যৌথ বিনিয়োগের কৌশলটি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে বলে আমি মনে করি।’
হালকা প্রকৌশল (লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং) শিল্পের সম্ভাবনা যাচাই ও অনান্য উদ্যোগ বাস্তবায়ন, ভারত থেকে আসা কাঁচামাল ও বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কিত একটি ভ্যালু চেইন উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যকার মানবিক সহযোগিতার দীর্ঘ তালিকায় আরও একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
যদি পিছিয়ে যাওয়া পেমেন্ট সম্পর্কিত সংশোধিত বিধানটি কার্যকর হয়, তাহলে তা বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য রফতানি এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত ও ভারতের বাইরে পণ্য রফতানিতে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় ভ্যালু চেইন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তা কাটাতে এবং বিশ্ববাজারের দিকেও নজর দিতে সাহায্য করবে বলেও জানান ফজলে ফাহিম।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কেনাকাটা সহজ করতে ভারতীয় ব্যাংকসমূহ থেকে বিলম্বিত এলসি প্রদানের সুবিধা বিলের দিন থেকে আরও ২৪০ দিন বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, এমন উদ্যোগ অন্যান্য দেশের সাথে ব্যবসায়িকভাবে সম্পৃক্ত বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের ভারতের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সহায়ক হবে।
মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার প্রেসিডেন্ট (গ্রুপ পাবলিক অ্যাফেয়ার্স) মনোজ চোগ বলেন, ‘উচ্চ আমদানি শুল্ক থাকার কারণে বিশেষ করে যাত্রী এবং বাণিজ্যিক যানবাহনগুলোর ক্ষেত্রে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বাংলাদেশের বাজারে এই ধরণের পণ্যের ক্ষেত্রে যথাযথ রিটেইল ফাইন্যান্স কার্যকর করা দরকার।’
দুই দেশের পণ্য চলাচল সহজ করতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রচারের জন্য রুটের যে পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন মনোজ, তার কথা উল্লেখ করে ফাহিম বলেন, ‘যেহেতু খরচের কার্যকারিতার দিক থেকে কনভেনশনগুলো এক রকমই রয়ে গেছে, তাই আমাদেরকে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্যের জন্য সেরা পথ হলো জলপথ। তার পরেই রয়েছে রেলওয়ে। অবশ্যই যাত্রীবাহী যানবাহনের মাধ্যমে যেসব পণ্য ও পরিষেবাগুলো ইতোমধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করে, সে বিষয়েও যত দ্রুত সম্ভব এই রুটগুলো বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।’
এই বিষয়ে রিভা গাঙ্গুলি বলেন, ‘দুই দেশই পণ্য সরবারহ করার ক্ষেত্রে কতটুকু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা যাচাই করার জন্যই ভারতীয় রেলওয়ে ও বাংলাদেশ রেলওয়ে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত আঞ্চলিক সহযোগিতাটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে যাত্রী ও বাণিজ্যিক যানবাহনের উপর শুল্ক কমানোর বিষয়ে চিন্তা করেছে। এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় বেশ কয়েকজন বিশেজ্ঞরা ভারত সরকারকে অভিনন্দনও জানিয়েছে।’
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসি) সেক্রেটারি জেনারেল দিলীপ চেনয় ও এফআইসিসি ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মানিষ সিংহলের সভাপতিত্বে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহম্মেদ, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং গ্রুপ এসবিআইর ডিএমডি ভেঙ্কট নাগেশ্বর সি এবং সিএনএইচ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর (ইন্টারন্যাশনাল) অশোক অনন্তরামনও এই ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।
এমইউএইচ/এমএসএইচ/পিআর