বাজেটে খুশি বিজিএমইএ, তবে...
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সঙ্কটের সময় ঘোষিত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সন্তোষ প্রকাশ করেছে পোশাক কারখানার মালিকদের বড় সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার আগে দুপুরে মন্ত্রিসভার প্রস্তাবিত বাজেটে অনুমোদন হয় এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দুর্যোগের মধ্যেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা সামনে রেখে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মহামারি শুরুর পর থেকে আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের অব্যাহত নীতি সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বিজিএমইএ। একই সঙ্গে বাজেটকে বাস্তবমুখী বলে মনে করছে সংগঠনটি। তবে রফতানি মূল্যের ওপর উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করায় কিছুটা অসন্তুষ্ট পোশাক মালিকরা।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে বিজিএমইএ জানায়, যখন সমগ্র বিশ্ব কোভিড-১৯ এর মহামারিতে টালমাটাল, জনজীবন পর্যন্ত বিপর্যস্ত, ঠিক সেরকম এক সংকটের মধ্যে থেকে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিজের দ্বিতীয় এবং দেশের ৪৯তম বাজেট ঘোষণা করলেন। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শীর্ষক বাজেটের লক্ষনীয় বিষয় হলো অর্থমন্ত্রী করোনার বাস্তবতার আলোকে গতানুগতিকতার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিজিএমইএ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রমিকদেরকে সম্ভাব্য আর্থিক অভিঘাত থেকে সুরক্ষার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি মজুরি ঋণ সহায়তা প্যাকেজ প্রদান করেছেন, যার মাধ্যমে শিল্প একটি তাৎক্ষনিক বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হয়েছে। আশা করি ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ও বৃহৎ শিল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সহায়তা প্যাকেজ দুটিও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে বিতরণ করা হবে। আমরা কৃতজ্ঞ যে, বাজেট প্রস্তাবনায় তৈরি পোশাক শিল্পখাতে রফতানির বিপরীতে যে নগদ সহায়তাগুলো চালু আছে, সেগুলো অব্যাহত রাখার এবং পাশাপাশি অতিরিক্ত ১ শতাংশ বিশেষ নগদ সহায়তাও অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সংগঠনটি বলছে, গত বছর পোশাক শিল্পের আবেদনের প্রেক্ষিতে উৎসে কর কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ হারে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। শিল্পের এই কঠিন সময়ে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ হারে আরও ৫ বছর অব্যাহত রাখতে অর্থমন্ত্রীর প্রতি বিজিএমইএ বিনীত অনুরোধ জানিয়েছে।
বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানায় বাজেট প্রস্তাবনায় আর্টিফিশিয়াল ফাইবার উৎপাদনকে কর হ্রাসের জন্য। যদিও রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদার কারণে গত কয়েক দশকে আমাদের পশ্চাদসংযোগ শিল্পখাতটি উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে, তথাপি প্রাথমিক বস্ত্রখাত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ম্যানমেড ফাইবার, পলিয়েস্টার, ভেজিটেবল ফাইবার ও অ্যানিমেল ফাইবার উৎপাদনে না গিয়ে কটন ফাইবার (প্রাকৃতিক তন্তু) উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পখাতে করপোরেট করহার গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানা ব্যতীত অন্যান্য কারখানার জন্য ১২ শতাংশ হারে বিদ্যমান রয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় এই হার আগামী দুই বছরের জন্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই ঘোষণা প্রদানের জন্য অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বিজিএমইএ।
গত বছর পোশাক শিল্পের আবেদনের প্রেক্ষিতে উৎসে কর কমিয়ে ০.২৫ শতাংশ হারে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। শিল্পের এই কঠিন সময়ে উৎসে কর ০.২৫ শতাংশ হারে আরও ৫ বছর অব্যাহত রাখতে অর্থমন্ত্রীর প্রতি বিজিএমইএ বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী রফতানিমুখী শিল্পের পণ্য মূল্যের ওপর উৎসে কর হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কাটার প্রস্তাব করেন। যদিও আয়কর অধ্যাদেশে এক শতাংশ হারে উৎসে করহার কর্তনের কথা বলা আছে। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে স্থানীয় পর্যায়ে সংগৃহীত পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রদান ও রিটার্ন দাখিল হতে অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাবটি সুবিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় নানা প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক।
এসআই/এমএসএইচ/এমএস