ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বাজেটের অর্ধেক অর্থই যাচ্ছে ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে

মেসবাহুল হক | প্রকাশিত: ০৮:৩৫ পিএম, ৩১ মে ২০২০

>> সর্বোচ্চ বরাদ্দ স্থানীয় সরকার বিভাগে, ৩৬১০৩ কোটি টাকা
>> প্রতিরক্ষা খাত দ্বিতীয় অবস্থানে, বরাদ্দ ৩৪৮১৭ কোটি টাকা
>> মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে থাকছে ৩৩১১৯ কোটি টাকা
>> ৫৭৭৮ কোটি বাড়িয়ে পঞ্চম খাত স্বাস্থ্য, বরাদ্দ ২৫৭২৩ কোটি

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মধ্যেই আগামী ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক অর্থই রাখা হচ্ছে ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য।

এবারের বাজেটের আকার প্রায় পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯৯৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে জনসম্পৃক্ত ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। যা মোট বাজেটের শতকরা ৪৭ ভাগ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে অর্থ বরাদ্দের শীর্ষে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৬ হাজার ১০৩ কোটি ১০ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তৃতীয় অবস্থানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ।

করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকায় তা দেয়া হয়নি। তবে চলতি বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শীর্ষ বরাদ্দের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে স্থাস্থ্যসেবা বিভাগ।

parlament-04.jpg

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের তুলনায় এক হাজার ৬৬০ কোটি ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকূলে সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৬ হাজার ১০৩ কোটি ১০ হাজার টাকা।

এছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ চার হাজার ৫৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাড়িয়ে আসছে বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৪ হাজার ৮১৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে চলতি বছরের চেয়ে তিন হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। শীর্ষ বরাদ্দের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে আছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ বিভাগে সম্ভাব্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৯ হাজার ৪৪২ কোটি ১২ লাখ টাকা। চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দ ২৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

শীর্ষ বরাদ্দের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে স্থাস্থ্যসেবা বিভাগ। এ বিভাগে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ১৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। অর্থাৎ এ খাতে এবার পাঁচ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুকূলে নিয়মিত এ অর্থ বরাদ্দের পরও করোনাভাইরাসের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বাজেটে। যা করোনাকালীন যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে খরচ করা যাবে।

এদিকে শীর্ষ বরাদ্দের ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ে আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা। শীর্ষ বরাদ্দের সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ বিভাগে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৪ হাজার ৮৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ২৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

এছাড়া শীর্ষ বরাদ্দের অষ্টম তালিকায় আছে জননিরাপত্তা বিভাগ। আসন্ন বাজেটে এ বিভাগের সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ ২২ হাজার ৬৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে ২১ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। শীর্ষ বরাদ্দের নবম অবস্থানে আছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ে নতুন বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১৭ হাজার ৯৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা।

দশম অবস্থানে রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আগামী অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে ১৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।

parlament-04.jpg

আসছে বাজেটে অর্থ-বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বাজেট ঘোষণা করতে হবে। তবে আমি বলব, এ প্রেক্ষাপটে এমন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার যাতে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। পাশাপাশি যেন প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যায়।

করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রায় পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যেখানে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তবে গত মার্চ মাসে তা সংশোধন করে এক লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত এডিপির অর্থ দিয়ে এক হাজার ৫৮৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এডিপির জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বহিঃসম্পদ থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকার জোগান দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মহামারির এই সময়ে স্বাস্থ্য খাত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং আমরা গুরুত্বও দিয়েছি। কিন্তু সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়। কারণ এ খাতের সক্ষমতা কতটুকু তাও দেখতে হবে। শুধু বরাদ্দ দিলেই তো হবে না, বাস্তবায়নও করতে হবে।’

এমইউএইচ/এমএআর/এমএস