ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ঈদকেন্দ্রিক বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:৪২ পিএম, ১৭ মে ২০২০

রোজার মধ্যে কিছুদিন কমার পর ঈদ সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা বা ১৩ শতাংশ। আর পাইকারিতে বেড়েছে চার টাকা বা ১১ শতাংশ।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ কাছাকাছি চলে আসায় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। অনেকে ঈদের জন্য কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। তাছাড়া বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ কম রয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

রোববার (১৭ মে) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা দু’দিন আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর রোজা শুরু হওয়ার আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে রোজার মধ্যে হুট করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার এ চিত্র উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবি জানিয়েছে, খুচরা পর্যায়ে ১৬ মে দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। আর ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম এখন একটু বাড়তি। মানুষ ঈদের জন্য কেনাকাটা শুরু করেছে। ফলে পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। এখন আমদানি করা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। আড়তে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। যে কারণে আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা পেঁয়াজ এখন ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

৫০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা রামপুরার ব্যবসায়ী আলম বলেন, ‘আড়তে দেশি পেঁয়াজের অভাব নেই। কিন্তু ঈদের কারণে এখন বিক্রি বেড়েছে। আমাদের ধারণা, এ কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এর আগে রোজার শুরুতেও পেঁয়াজের এমন দাম বেড়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ঈদের আগের পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা খুব কম। বরং দাম আরও বাড়তে পারে।’

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী নোয়াব আলী বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) থেকে (পেঁয়াজের) বাজার একটু বাড়তি। আগে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি আমরা বিক্রি করেছি ৩৮ টাকা। সেই পেঁয়াজ গতকাল থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের কারণে এখন পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ বেড়েছে। তাছাড়া ঢাকা ছেড়ে যাওয়া গার্মেন্টসের শ্রমিকরাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ আবার ঢাকায় আসছে। এ কারণে বিক্রি বেড়েছে। মূলত এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।’

পেঁয়াজের এই দাম বাড়া-কমার খেলা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও তা আর ১০০ টাকার নিচে নামেনি।

তবে চলতি বছরের মার্চের শুরুতে রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত। ভারত রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর দেশের বাজারে দফায় দফায় কমতে থাকে পেঁয়াজের কেজি। কয়েক দফা দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় নেমে আসে।

কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। ৪০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে ৮০ টাকায় উঠে যায়। এ পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদফতর ও র‌্যাব। পেঁয়াজের বাজারে চলে একের পর এক অভিযান। এতে আবারও দফায় দফায় দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নেমে আসে।

তবে রোজার আগে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। রোজাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু রোজাকেন্দ্রিক বিক্রি শেষ হতেই কিছুটা দাম কমে। কিন্তু এখন ঈদ সামনে চলে আসায় আবার পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

খিলগাঁও থেকে পেঁয়াজ কেনা জাহিদুল বলেন, ঈদ কাছে চলে এসেছে। তাই ঈদ উপলক্ষে কিছু কেনাকাটা করছি। কখন কিসের দাম বেড়ে যায়, তা বলা মুশকিল। তাই বিভিন্ন ধরনের মসলার পাশাপাশি পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনলাম। প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে ৫০ টাকা। এর আগে রোজার শুরুতে ৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলাম। তবে রোজার মধ্যে একদিন ৪৫ টাকা কেজিতে কিনতে পেরেছিলাম। এখন যেহেতু দাম বাড়া শুরু হয়েছে, সুতরাং সামনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে তো গত এক বছরে কম ঘটনা ঘটেনি।

রামপুরার বাসিন্দা শহিদ বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে খেলা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। যখনই পেঁয়াজের বিক্রি বাড়ছে, তখনই দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার বিক্রি কমলে দেখা যাচ্ছে দাম কমছে। এতেই স্পষ্ট পেঁয়াজের দাম কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হচ্ছে। যারা পেঁয়াজ নিয়ে এমন খেলা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

এমএএস/এসআর/পিআর