কাকরোল ‘ভিআইপি’
করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে বেশকিছু দিন তুলনামূলক কম থাকলেও রোজার মধ্যে রাজধানীর বাজারগুলোতে বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে। বেশিরভাগ সবজির কেজি এখন ৪০ টাকার ওপরে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে নতুন আসা কাকরোল। কোথাও কোথাও এই সবজিটির কেজি এক’শ টাকা ছুঁয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে দেখা যায়, মান ভেদে কাকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে রামপুরা ও মালিবাগের বিভিন্ন বাজারে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হতে দেখা যায় কাকরোল। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে কাকরোলের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাকরোল বাজারে নতুন এসেছে। সরবরাহ তুলনামূলক কম। তবে ক্রেতাদের মধ্যে বেশ চহিদা আছে। এ কারণে দাম তুলনামূলক বেশি। তবে সব শ্রেণীর ক্রেতা কাকরোল কিনছেন না। কাকরোলের জন্য বিশেষ শ্রেণীর ক্রেতা আছে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, ভাই কাকরোল এখন সবার জন্য না। বাজারে এখন কাকরোল ভিআইপি পণ্য। বর্তমান বাজারে সবজির মধ্যে একমাত্র কাকরোলই ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তারপরও যা আনি তার সবই বিক্রি হয়ে যায়। একদিনের কাকরোল, অন্যদিন বিক্রি করা লাগে না।
এই ব্যবসায়ী বলেন, এখন ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও, এক সময় এই সবজি ৪০ টাকা কেজিতেও নামবে। তখন সব শ্রেণীর ক্রেতারাই কাকরোল কিনবেন। তবে এখন কাকরালের যে স্বাদ, তখন সেই স্বাদ পাওয়া যাবে না।
রামপুরার ব্যবসায়ী মিলন বলেন, এখন সব ধরনের সবজির দামই তুলনামূলক একটু বেশি। তবে কাকরোলের দাম অন্য সবজির থেকে বেশি। এর কারণ হলো কাকরোল বাজারে নতুন এসেছে। যে কোনো সবজি বাজারে নতুন আসলে দাম একটু বেশিই থাকে। তাছাড় এখন কাকরোলের সরবরাহও কম। সামনে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে।
এদিকে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজার আগে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শশার দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। রোজার আগে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
দাম বড়ার এ তালিকায় রয়েছে চিচিঙ্গা, পটল, পেঁপেও। ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিচিঙ্গার দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটলের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁপের দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
রোজার মধ্যে বেশকিছু সবজির দাম বাড়লেও করলা, বরবটি এবং ঝিঙার দাম আগের মতোই স্থির রয়েছে। বাজার ও মান ভেদে করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বরবটি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ঝিঙা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী আলম বলেন, এখন বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম। মুলা, ফুলকপি, বাধাকপি পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ঢাকায় মানুষ কম থাকার কারণে সবজির দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। ঢাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন থাকলে এখন সব ধরনের সবজির দাম আরও বেশি হত।
এদিকে সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি, গরু ও খাসির মাংস। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকা। নলা (ছোট রুই) মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৮০ টাকা কেজি, শিং ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এমএএস/এমএফ/জেআইএম