মুনাফা ধারায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টিউবস
মুনাফার ধারায় ফিরেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড (এনটিএল)। বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (বিএসইসি) অধিভুক্ত দেশের একমাত্র সরকারি পাইপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯-২০ অর্থ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা লাভ করেছে। পাশাপাশি ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ বিভিন্ন খাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৭ কোটি ১ লাখ টাকা প্রদান করেছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত নানাবিধ কারণে এ প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জন করতে না পারলেও গত তিন বছরে কারখানাটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যথাক্রমে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার, ৫ কোটি ৭০ লাখ ৮১ হাজার ও ৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা জমা দিয়েছে ।
এর আগে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে যথাক্রমে ৫ কোটি ৯১ লাখ ৮৪ হাজার এবং ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করেছিল। একই সঙ্গে ওই দুই বছর প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যথাক্রমে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার এবং ৯ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা জমা দিয়েছিল।
ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড আন্তর্জাতিক মানের এমএস, জিআই ও এপিআই পাইপ উৎপাদন করে থাকে। এর কারখানায় হাউজিং এস্টেট ও সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য আন্তর্জতিক মানের এমএস ও জিআই পাইপ উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (এপিআই) লাইসেন্সের আওতায় তৈল ও গ্যাস সঞ্চালন এবং জাহাজের পাইপিংয়ে কাজে ব্যবহারের জন্য এপিআই গ্রেডের স্টিল পাইপ উৎপাদন করে আসছে।
জানা গেছে, এনটিএলই দেশে একমাত্র এপিআই গ্রেডের পাইপ উৎপাদন করে থাকে। উৎপাদন করছে বয়লার লাইনে ব্যবহারের জন্য ২৪৫˙সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ২৫ বার প্রেসারের সহনীয় পাইপ। গুণগত মানের জন্য বর্তমানে এর উৎপাদিত পাইপ মেট্রোরেল প্রকল্পেও ব্যবহার হচ্ছে ।
এ বিষয়ে এনটিএলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শা এম জিয়াউল হক জানান, চার যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বমানের পাইপ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে এনটিএল। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মান প্রতিষ্ঠান আইএসও, কেজিএস, ব্যুরো ভেরিটাস, এপিআই এবং দেশিয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের কোয়ালিটি সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, গুণগত মান উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এনটিএল ইতোমধ্যে ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে।
তিনি সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে সরাসরি পণ্য ক্রয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, পিপিআর অনুসরণ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউডি, পাবলিক হেল্থ, সামরিক বাহিনীসহ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এনটিএলের পণ্য সরাসরি ক্রয় করার জন্য সরকারি পরিপত্র জারি করা হলে এনটিএল যেমন লাভবান হবে, তেমনি সরকারি কোষাগারেরও রাজস্ব বাড়বে।
বিএসইসি সূত্র জানায়, পণ্য বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে এনটিএল ইদানিং স্টিল সেড, বিলবোর্ড ও স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণ করছে। এর কারখানায় স্থাপন করা হয়েছে উন্নতমানের গ্যালভানাইজিং প্লান্ট। এতে যেকোনো ধরনের লৌহজাত পণ্য সুলভমূল্যে গ্যালভানাইজ্ড করা হয়। এনটিএল সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিপ বিল্ডিং, শিপ রিপিয়ারিং ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পাইপ ও স্ট্রিল স্ট্রাকচার তৈরি করে থাকে। বিক্রয় বৃদ্ধি ও দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কারখানায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং নেয়া হচ্ছে অনলাইন পার্সেস অর্ডার। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে লাভের ফিরে আসছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এনটিএল ছিল আদমজী গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। এনটিএলের কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যয় ও অপচয় হ্রাস এবং কারখানার মেশিনারিজ যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এনটিএলের ৩নং মিলের আধুনিকায়ন শীর্ষক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নে জিওবি হতে ২৪ কোটি ৮২ লাখ ৩৮ হাজার ও নিজস্ব অর্থ হতে ৬ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এটি সমাপ্ত হলে রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানা পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও গুণগত মানের পণ্য উৎপাদনের পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
এসআই/এমএসএইচ/এমএস