ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বিদায় নিজামী, অপেক্ষায় খায়রুল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ০৪ মে ২০২০

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী। সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিএসইসি থেকে সোমবার বিদায় নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে বিএসইসির চার কমিশনারের মধ্যে তিনটি পদ খালি হয়ে গেলো।

এদিকে বিএসইসি থেকে বিদায় নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির বহুল আলোচিত-সমালোচিত চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনও। আগামী ১৪ মে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে। এর মাধ্যমে ২০১০ সালের মহাধসের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির সব কমিশনার ও চেয়ারম্যানের বিদায় হবে।

২০১০ সালে মহাধসের পর তদন্ত কমিটির সুপারিশে বিএসইসির পুনর্গঠন করে সরকার। এতে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান খায়রুল হোসেন। তার সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চালানোর দায়িত্ব পান অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, আরিফ খান ও মো. আমজাদ হোসেন। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নামও পাল্টে যায়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) থেকে সংস্থাটির নাম বদলে হয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদ দিয়ে পুনর্গঠিত বিএসইসি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লে একপর্যায়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিএসইসির কমিশনারের পদ ছেড়ে দেন আরিফ খান। তবে কিছুদিনের মধ্যে তিনি আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে যোগ দেন। আর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৮ সালে কমিশনার পদ থেকে বিদায় নেন আমজাদ হোসেন।

এর মধ্যেই বিএসইসির কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা, যিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন।

অন্যদিকে আইন লঙ্ঘন করে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানের অধ্যাপক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। আইনে সুযোগ না থাকার পরও কিছুদিনের মধ্যে হেলাল উদ্দিন নিজামীর মেয়াদও বাড়ানো হয়েছিল।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ সালের ৫ এর ৬ উপধারায় বলা আছে, 'বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারগণ শুধু একটি মাত্র মেয়াদের জন্য পুনঃনিয়োগের যোগ্য হইবেন।'

কিন্তু খায়রুল হোসেন ও নিজামীর মেয়াদ দু’দফা বাড়ানো হয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ দুই পদে এমন নিয়োগের মধ্যে দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন, প্লেসমেন্ট অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে বিএসইসির ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে থাকে। চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন ও কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীসহ পুরো কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করে মতিঝিলের রাস্তায় দিনের পর দিন বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে সব সমালোচনা পেছনে ফেলে টানা ৯ বছর বিএসইসির দায়িত্ব পালন করে যান খায়রুল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন নিজামী। দীর্ঘ ৯ বছর দায়িত্ব পালনের পর মেয়াদ শেষে সোমবার (৪ মে) বিএসইসির কমিশনার পদ থেকে বিদায় নেন নিজামী। তবে করোনাভাইরাসের জন্য সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে অফিস বন্ধ থাকায় বিএসইসি থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা পাননি তিন।

এদিকে বিএসইসির কমিশনার পদ থেকে বিদায় নিলেও হেলাল উদ্দিন নিজামী নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরে আসতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শেয়ারবাজারের স্টেকহোল্ডারদের বড় অংশই নিজামীর বিপক্ষে রয়েছেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কঠোর সমালোচনা করায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক প্রভাবশালী স্টেকহোল্ডারদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন।

বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ কে এম মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, নীতি, নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, সাহস আছে এমন ব্যক্তিকে আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে চাই। যাদের নীতি, নৈতিকতা, সাহস নেই তাদের এখানে আসা উচিত না। এই কমিশনের ওপর বিনিয়োগকারীরা সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং নতুন বতলে পুরাতন মদ কেউ চায় না।

তিনি বলেন, আমরা চাই এমন ব্যক্তি বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আসুক, যিনি প্রথমেই বাইব্যাক আইন কার্যকর করবেন। যেসব কোম্পানির শেয়ার ইস্যু মূল্যের নিচে নামবে, সেই কোম্পানির শেয়ার পরিচালকদের বাইব্যাক করতে হবে। এটা করলে বাজারে বাজে কোম্পানি আসা বন্ধ হবে।

এদিকে হেলাল উদ্দিন নিজামীর বিদায়ের মধ্য দিয়ে বিএসইসির তিনটি কমিশনার পদ খালি হয়ে গেলো। ফলে নতুন কমিশনার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কোরাম সংকটে বিএসইসির আর কমিশন সভা হবে না। এতে আইপিও ও রাইট অনুমোদন, আইনকানুন প্রণয়ন ও সংশোধনসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ করতে পারবে না নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল বিএসইসির কমিশনারের পদ থেকে বিদায় নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা। আর একটি পদ আগে থেকে খালি রয়েছে। আগামী ১৪ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। ফলে এ সময়ের মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেয়া হলে কমিশনাদের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের পদও খালি পড়ে থাকবে। তখন শুধু একজন কমিশনার দিয়ে চলবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এমএএস/জেডএ/জেআইএম