ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতে আমদানি-রফতানি সার্বক্ষণিক চালু থাকছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:০৮ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২০

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা এবং ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়াতে গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং শাক-সবজির বিপণন, সরবরাহ ঠিক রাখা ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানান পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সার্বক্ষণিক উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনলাইন সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন। করোনা পরিস্থিতিতে শাক-সবজি, বীজ ও সতেজ কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ ও সরবরাহে করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, করোনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

আমদানি-রফতানি অব্যাহত রাখায় উদ্যোগ
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সাধারণ ছুটি চলাকালীন খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সার্বক্ষণিক উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, গত ২৯ মার্চ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি পরিস্থিতিতে রফতানিযোগ্য পণ্যের ৯৩টি উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সনদপত্র এবং আমদানিকৃত টাটকা ফল ও মসলা জাতীয় পণ্যের ১০৪০টি, কাঁচা তুলা ও ডাল জাতীয় পণ্যের ৪১৩টি এবং চাটার্ড ভেসেলে আমদানিকৃত পণ্যের ১৪৫টি ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে। এসময়ে বিভিন্ন আমদানি পণ্যের অনুকূলে ৪৬৭টি আমদানি অনুমতিপত্র ইস্যু করা হয়েছে।

তাছাড়া এই কদিনে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রভৃতি দেশে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন আলু রফতানির ৯৩টি উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সনদপত্র ইস্যু করা হয়েছে।

শাক-সবজি বাজারজাতকরণে উদ্যোগ
করোনা পরিস্থিতিতে শাক-সবজির বাজারজাতকরণ ও কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, শাক-সবজি ও পচনশীল কৃষিপণ্যের চলাচল নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত ত্রাণসামগ্রীতে আলু, সবজি, পেঁয়াজ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কৃষি বিপণন অধিদফতর কৃষিপণ্যের ভ্রাম্যমাণ বাজার পরিচালনা শুরু করেছে। পাশাপাশি লকডাউন এলাকার উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য ঘাটতি এলাকায় প্রেরণের ক্ষেত্রে ট্রাক চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ফলে শাক-সবজির বাজারজাতকরণ কিছুটা সহজতর হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, আজকের সভায় পাওয়া সুপারিশ অনুয়ায়ী বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহার, বিদেশে রফতানির জন্য কার্গো ভাড়া, দেশের সুপারশপ খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানো এবং সমন্বয়ের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।

সভায় জানানো হয়, দেশের জেলাগুলোর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও ভোলা শাক-সবজিতে উদ্বৃত্ত জেলা। এসব জেলা থেকে ট্রাকযোগে শাক-সবজি অন্য জেলায় পাঠানো হচ্ছে।

বীজ সরবরাহ অব্যাহত রাখায় উদ্যোগ
করোনার কারণে উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয় সেজন্য গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিপণন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিএডিসি ও অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানির উৎপাদিত আউশ, সবজি ও পাটবীজ সরবরাহ করা হয়েছে এবং যা বর্তমানে মাঠে কৃষক আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া রবি মৌসুমে উৎপাদিত আলু বীজ সংগ্রহ করে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যার মধ্যে বিএডিসির আলু বীজ সংগ্রহের পরিমাণ ৩৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন এবং বেসরকারি কোম্পানির প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন বেশি।

সভায় জানানো হয়, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এক লাখ মেট্রিক টন বোরো বীজ ধান ও ১০ হাজার মেট্রিক টন হাইব্রিড ধান বীজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

সভা শেষে কৃষিখাতে প্রণোদনা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এর সাথে বর্তমান বাজেটে কৃষকদের স্বার্থে সারসহ সেচকাজে বিদ্যুৎ বিলের রিবেট বাবদ কৃষিখাতে নয় হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সার্বিক কৃষিখাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৯ শতাংশ সুদের স্থলে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ প্রণোদনা প্রদান করা হবে। এর মানে হলো কৃষিখাতে মোট ৪ শতাংশ সুদে প্রণোদনা দাঁড়ালো ১৯ হাজার ৫০০।

অনলাইন সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ এবং হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হান্নান সংযুক্ত ছিলেন।

ফল-সবজি, সতেজ কৃষিপণ্য রফতানিকারক, ফুড প্রসেসর, সুপারশপ ব্যবসায়ী-ব্যবস্থাপক ও বীজ ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাপা, স্কয়ার ফুড, প্রাণ গ্রুপ, তাইওয়ান ফুড প্রসেসিং, পটেটো এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, রহিমআফরোজ, মীনাবাজার, সুপ্রিম সিড, এসিআই, এমএম ইস্পাহানি, ব্র্যাক, ইউনাইটেড সিড, মল্লিকা সিড, আফতাব বহুমুখী ফার্মস, পারটেক্স এগ্রো, মেটাল সিড প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সংযুক্ত ছিলেন।

এছাড়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য (সচিব) ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, সাবেক সচিব জেড করিম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. এস. এম নাজমুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান প্রমুখ সংযুক্ত থেকে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এমইউএইচ/এইচএ/এমএস