ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

জীবিকা-অর্থনীতি বাঁচাতে শিল্প কারখানা খুলে দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও জীবিকা বাঁচাতে দেশের রফতানিমুখী শিল্পখাতসহ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা খাতওয়ারি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে টাস্কফোর্স গঠন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশও করেছেন।

শনিবার (২৫ এপ্রিল) দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তারা এ সুপারিশ করেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ও এডিটরস গিল্ডসের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসি টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মন্জুরুল ইসলাম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, আবদুল মাতলুব আহমাদ, এ কে আজাদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম এবং বিকেএমইএ, ডিসিসিআইসহ নানা ব্যবসায়ী সংগঠন ও চেম্বারের নেতারা।

jagonews24

লাখ লাখ শ্রমিকের জীবিকা ও দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য সীমিত আকারে হলেও পর্যায়ক্রমে শিল্প কারখানা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়ার মত প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো এ মুহূর্তে তাদের রফতানিমুখী শিল্পখাত খুলে দেওয়ার বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বক্তারা করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজেরও প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে শিল্প কারখানা বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্তের আলোকে পর্য়ায়ক্রমে খুলে দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি হবে এবং আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কতটুকু আছে, সেসব বিষয় পর্যালোচনা করে অতি সতর্কতার সাথে কলকারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সারা পৃথিবীই ঝুঁকির মধ্যে। জার্মানি, ফ্রান্সের মত দেশ করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে থাকার পরও তারা তাদের প্রধান শিল্পখাত ধীরে ধীরে খুলে দিচ্ছে। এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন খাত পর্যালোচনা করে আমাদেরও পদক্ষেপ নিতে হবে।

সেক্ষেত্রে এফবিসিসিআইকে একটি গাইডলাইন তৈরি করে সরকারকে দেয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা।

শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, এফবিসিসিআই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে শুরু থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে সম্ভাব্য হেলথ প্রটোকল মেনে কিভাবে দেশের শিল্প কারখানা ধীরে ধীরে খুলে দেয়া যায় সেটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

খাদ্যদ্রব্য পরিবহন ও কৃষিপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করা জরুরি বলে মত দেন ব্যবসায়িক নেতা ও আলোচকরা। বিশেষ করে চলতি রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার বিষয়ে জোর দেন তারা।

ড. রুবানা হক বলেন, পোশাকশিল্পের ৮৬৫টি কারখানা খুলে দেয়ার দাবি আছে। এ পর্যন্ত তিন বিলিয়ন ডলারের ওপর অর্ডার বাতিল হয়েছে। আমাদের ওপর কারখানা খুলে দেয়ার চাপ আছে। অনেকের অর্ডার আছে।

এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে, দিনক্ষণ বেঁধে, সীমিত আকারে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে কারখানা খুলে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে যদি অর্ডার চলে যায় তাহলে তা ফেরত আনা কঠিন হবে। তাই সীমিত শ্রমিক নিয়ে সীমিত আকারে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।

jagonews24

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শিল্প ও দেশের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙে চিহ্নিত করে বিভাজন করা জরুরি। সেক্ষেত্রে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সাথে নিয়ে খাতভিত্তিক হেলথ প্রটোকল নির্ধারণ করে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার এই পর্যন্ত যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তা প্রশংসিত, কিন্তু এর পরিমাণ যথেষ্ট নয়, আরও বাডাতে হবে।

মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের জন্য চলতি মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত কোনো প্রকার জরিমানা ছাড়াই যেন পণ্য ছাড় করা যায় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিপিং এজেন্টদের অফিস দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকায় কাগজ তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে এবং তাতে জরিমানা গুণতে হচ্ছে ব্যব্যসায়ীদের।

শিপিং অফিস দুপুর ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা শুধু রমজান মাসেই প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে থাকেন। কিন্তু এবার তার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কিভাবে তাদের ব্যবসা পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া যায়, সে ব্যাপারে একটি নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আলোচনায় সিলেট, খুলনা, রংপুর, সুনামগঞ্জ, জামালপুর চেম্বারের ব্যবসায়িক নেতারাও ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

এসআই/এইচএ/এমকেএইচ