ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

পোশাক খাতে করোনার আঘাত: রফতানি কমেছে ৮৩ শতাংশ

প্রকাশিত: ১০:০৮ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২০

# ২৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার রফতানি আদেশ বাতিল

# এখনও মার্চের বেতন পাননি ১৩ শতাংশ শ্রমিক

# শ্রমিকদের বেতন প্রদানে জটিলতায় কারখানার মালিকরা

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরাসরি বাণিজ্যিক আঘাত হেনেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে। লকডাউনে বন্ধ রয়েছে ব্যবসা। অচল হয়ে পড়ছে বিশ্ব বাণিজ্য। এতে একের পর এক বাতিল হচ্ছে পোশাকের ক্রয় আদেশ। নতুন আদেশও আসছে না। বন্ধ হচ্ছে শিপমেন্ট। ফলে ব্যাপক হারে কমছে পোশাক রফতানি। যার প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে ব্যাপক হারে দেশে পোশাক রফতানি কমে গেছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের এক সময়ের তুলনায় ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনে রফতানি হয়েছিল ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পোশাক।

আগের মাস মার্চেও রফতানিতে বড় ধাক্কা খায় পোশাক খাত। গেল মার্চে ১৯৭ কোটি ২২ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ২৬ দশমিক ৭০ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের মার্চে ২৬৯ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছিল।

এদিকে পোশাক খাতের এ ভয়াবহ সংকটের মধ্যে প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে পোশাকের ক্রয় আদেশ। সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ১৪০টি কারখানার ৯৭ কোটি ৯০ লাখ পোশাক পণ্যের রফতানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে। যার আর্থিক পরিমাণ ৩ দশমকি ১৬ বিলিয়ন বা ৩১৬ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাক (বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে)।

বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে এ খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, প্রতি মুহূর্তে ক্রেতারা ক্রয় আদেশ স্থগিত করছেন, বলছেন স্থগিত। তবে আমাদের জন্য এটি স্থগিত নয় বাতিল। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক খাত ভয়াবহ সংকটে আছে।

তিনি বলেন, একের পর এক অর্ডার বাতিল। শুধু তাই নয়, আগের পণ্যও ক্রেতারা নিচ্ছেন না। যাও কিছু নিচ্ছে তার বিল ঠিকমত পরিশোধ করছেন না। আমাদের রফতানি নেই বললেই চলে। এখন অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন বন্ধ। আগামীতে কী হবে বলা যাচ্ছে না।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এটা আমাদের একার সমস্যা নয়, বিশ্বব্যাপী সংকট। এখন আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে ক্রেতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়। পাশাপাশি কীভাবে অর্ডার বাতিল ও স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যায়, তার ওপর জোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে রফতানি আদেশ বাতিল ও শিপমেন্ট না হওয়ায় নানামুখী সংকটের কারণে দেশের সব চেয়ে বড় শ্রমঘন এ শিল্পখাতে শ্রমিকদের বেতন প্রদানে জটিলতায় পড়েছে কারখানার মালিকরা। বিষয়টি বিবেচনায় করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্যাকেজ থেকে বিনা সুদে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিয়ে ঋণ নিতে পারবে উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ পণ্য রফতানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান। ঋণের অর্থ দিয়ে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।

বেতন-ভাতা

করোনাভাইরাসের প্রভাবে আর্থিক সমস্যার কারণে অনেক পোশাক মালিক শ্রমিকদের গেল মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেন নি।

বিজিএমইএর দেয়া তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত তৈরি পোশাক খাতের ২১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ শ্রমিক মার্চের বেতন পেয়েছেন, যা বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের ৮৭ শতাংশ। তবে এখনও তিন লাখ ১৩ হাজার ৩১৭ শ্রমিক মার্চ মাসের বেতন পাননি, যা বিজিএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ১৩ শতাংশ।

সংগঠনটি জানিয়েছে, বিজিএমইএর সদস্য দুই হাজার ২৭৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক হাজার ৬৬৫টি প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ, ৭৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে।

যারা এখনো বেতন পরিশোধ করেনি, তাদের বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি জানান, এখন পর্যন্ত ৮৭ শতাংশ শ্রমিক মার্চের বেতন পেয়েছেন। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে। যারা বেতন দেননি তাদের অধিকাংশ ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আর্থিক সমস্যা, ব্যাংকিং জটিলতা ও চলমান পরিস্থিতিতে যাতায়াতের কারণে বেতন পরিশোধ করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আগামী ২০ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে শতভাগ শ্রমিক মার্চে বেতন পাবেন বলেন তিনি আশ্বাস দেন।

সার্বিক রফতানি কমেছে

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের আট মাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্জিত আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমকি ৭৯ শতাংশ কম। অর্থবছরের বাকি মাসেও রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এছাড়া একক মাস হিসেবে গেল ফেব্রুয়ারিতে দেশে সার্বিক রফতানি আয় হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে আয় ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমা মানে এর প্রভাব পুরো রফতানি খাতে পড়েছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। একই সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

নতুন পণ্য তৈরির লক্ষ্যে পোশাক খাত

এদিকে করোনার প্রভাবে বিশ্বে মন্দা দেখা দিতে পারে। ফলে পোশাকের চাহিদা আগের মতো থাকবে না। তাই বিশ্বের বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় পণ্য উৎপাদনে জোর দিতে হবে বলে মনে করছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে হাসপাতালগুলোতে এখন পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাই দেশ-বিদেশে এর চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করতে চায় বিজিএমইএ। এজন্য আগামী ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে রফতানি যোগ্য বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদন পরিকল্পনা নিয়েছে সংগঠনটি।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, মানসম্মত পিপিই উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার কাছে সহায়তা চেয়েছি। তারা প্রযুক্তিগতসহ এ সেক্টরে মার্কেট তৈরিতে সহায়তা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। এই প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে সম্পন্ন। তাদের সহায়তায় আগামী ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এই সেক্টরকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নত করতে পারবো এবং চতুর্থ ধাপের পিপিই তৈরি করার মতো ক্ষমতা ও জ্ঞান অর্জন করবে আমাদের গার্মেন্টস খাত।

এসআই/এমএসএইচ/এমকেএইচ