স্বাস্থ্যবীমা নয় সরাসরি আর্থিক সুবিধা পাবেন সরকারি চাকুরেরা
করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তাদেরকে বিশেষ আর্থিক সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কীভাবে তাদের বিশেষ এ সুবিধার আওতায় আনা যাবে সে বিষয়ে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রসাশনের যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যবীমার পরিবর্তে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা ভাবছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
রোববার (১২ এপ্রিল) নীতিমালা চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব জাফর ইকবাল, আইডিআরএর সদস্য মোশাররফ হোসেন, জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রিমিয়াম দিতে হবে। এছাড়া বীমার টাকা পেতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়।
এ জন্য সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় অবদান রাখছেন। পাশাপশি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রসাশনের যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা ভাবছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৈঠকে এমনটিই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যেসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে ১৫-৩০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি পাবেন পাঁচ লাখ টাকা, ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ টাকা আর প্রথম-৯ম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা। আর সরকারি কোনো কর্মকর্তা মারা গেলে এর পাঁচগুণ আর্থিক সহায়তা পাবেন।
এসব সুবিধা দিয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। যেটি খুব শিগগির চূড়ান্ত হবে। আর এ বিশেষ সুবিধা বাস্তবায়ন করবে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাফর ইকবাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আমরা অর্থ সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠক করেছি। প্রাথমিকভাবে কিছু কাজও হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবীমা না সরসারি সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে সরাসরি অর্থ দেয়া হবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে খুব শিগগির এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত কর্মচারী যারা রয়েছেন তারা এ বিশেষ সুবিধা পাবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে ৫ এপ্রিল ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন চারটিসহ পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষি খাতের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ একটি।
এমইউএইচ/এএইচ/জেআইএম