ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বেতন না পেয়ে বিপাকে পোশাককর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৫৭ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২০

সাভারের জিরাবো এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন হৃদয়। গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু ফুরিয়েছে তার গ্রামে থাকা পরিবারের। কিন্তু গ্রামে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন না হৃদয়। এপ্রিলের শুরুতে বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও করোনার অজুহাতে মাসের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও বেতন দিচ্ছেন না মালিক। কবে বেতন দেবে, তা এখনও অজানা। শুধু হৃদয় নন, এমন হাজারও পোশাককর্মী বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

শুক্রবার (১০ মার্চ) সাভারের কয়েকজন পোশাককর্মীর সঙ্গে কথা হলে সবাই প্রায় একই কথাই জানান। এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৬ এপ্রিলের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ পোশাক কারখানায় বেতন দেয়ার প্রক্রিয়ায় শুরু হয়নি। এছাড়া মাসের ১০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও বেতন না পাওয়ায় শ্রমিকদের মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।

পোশাককর্মীরা জানান, এপ্রিল মাসের ১০ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মালিকরা বেতনের টাকা দিচ্ছে না। ফলে বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না। ঘরে খাবার-দাবার ফুরিয়েছে, কিনতেও পারছেন না। দোকানপাট বন্ধ থাকায় বাকি আনারও সুযোগ নেই। প্রায় সবারই বেতন না হওয়ায় টাকা-পয়সা ধারও করতে পারছেন না।

অন্যদিকে, সবকিছু বন্ধ থাকার কারণে বাইরেও যেতে পারছেন না, অন্য কোনো কাজ করারও সুযোগ নেই। ফলে অর্ধাহার, অনাহারে দিন কাটছে তাদের। ফলে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়।

তারা আরও জানান, সাভারের জিরাবোর একটি কারখানায় বেতন দেয়া হয়েছে। বেতন দিলেও ওভারটাইমের টাকা আটকে দিয়েছে মালিক। জিরাবোর কিছু পোশাক কারখানা ১২ এপ্রিল খোলার কথা রয়েছে। তারা আশা করছেন, ওই দিন কোনো সুসংবাদ আসতে পারে। তবে বেতন দিলেও ওভারটাইম দেয়া নিয়ে টালবাহানা করায়, তাদের মধ্যে পুরো বেতন পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে, পোশাক শ্রমিকদের করোনা থেকে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় না দিয়ে চালু রাখা হয়েছে বেশ কিছু কারখানা।

হৃদয় বলেন, ‘আমাদের এখনও বেতন হয়নি। মালিক এ পর্যন্ত বেতন কবে দেবে, সেই ডেট (তারিখ) দেয়নি। বলছে, ১২ তারিখ (এপ্রিল) খোলার পরে ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) দেবে। ওই দিন শুনতাছি, কাগজপত্র জমা নেবে। শুনতাছি, এখন থেকে ব্যাংকে বেতন দেবে। কিন্তু এই মাসে এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামে আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। বাড়িতে টাকা পাঠাইছি ওই মাসে, এই মাসে পাঠাইতে পারিনি। বেতন অইচে না পাঠাব কীভাবে। বাড়ির মানুষ সমস্যায় তো আছেই।’

জিরাবোতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন মো. রাজিম খান। তিনিও বেতন পাননি। জানেনও না, কবে বেতন পাবেন। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে চলতাছি। বাড়িতেও যাইতে পারতাছি না। অবস্থা খারাপ। সবারই কষ্ট অইতাছে, বুঝচ্ছেন। বেতন দিতে হবে, এটাই আমাদের দাবি। খালি হুনতাছি, ১২ তারিখ খুলবে আমাদের। বেতন দিবো নাকি দিবো না, শিওর (নিশ্চয়তা) নাই। বেতন না দিলে তো কষ্টের মুখে পড়ে গেলাম। খাইতে পারলাম না, কোনো কিছু করতে পারলাম না। বইসা বইসা থাহা লাগব।’

উল্লেখ্য, দেশে করোনার বিস্তার ঠেকাতে চার দফায় ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান। জরুরি পণ্য উৎপাদন ও পরিবহনের কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সবই বন্ধ। কয়েক জেলায়, এলাকায় ও ভবন লকডাউন করেছে প্রশাসন। এতে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। যদিও বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে।

পিডি/এফআর/জেআইএম