করোনা : ব্যাংকগুলোতে টাকার সরবরাহ বাড়াতে বিশেষ ছাড়
করোনাভাইরাসের ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যাংক ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট) এবং রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুদহার এবং সিআরআর কমানো হয়েছে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। নগদ জমা সংরক্ষণের হার ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের আলাদা দু’টি সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে এ তথ্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৫টি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজের আওতায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই), শিল্প ও সেবা খাতে ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উৎস থেকে। ব্যাংক ঋণনির্ভর সরকারি এসব প্রণোদনা বাস্তবায়ন ও ঋণসুবিধা দিতে যেন তারল্য সংকট না হয় জন্যই এ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেপো (পুনঃ ক্রয় চুক্তি) সুদহার কমিয়ে সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনারভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়ন ও তারল্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বেসিস দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। এ নির্দেশনা আগামী ১২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত ২৩ মার্চ রেপোর সুদহার বেসিস দশমিক ২৫ শতাংশ কমিয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়।
একই কারণে নগদ জমার হার (সিআরআর) সংক্রান্ত অপর এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ’ গত ২৩ মার্চ সার্কুলারের অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের সব তফসিলি ব্যাংককে (শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকসহ) তাদের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের ৫ শতাংশ দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে এবং ন্যূনতম ৪ দশমিক ৫ শতাংশ দৈনিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা (সিআরআর) হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে নগদ জমা সংরক্ষণের হার দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৪ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে।
আমানতকারীদের সুরক্ষায় প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। এর মধ্যে একটি অংশ রাখতে হয় নগদে যাকে সিআরআর বলে। বাকি অংশ রাখতে হয় বিভিন্ন বিল ও বন্ডের বিপরীতে। দুইটি মিলে গত ১ এপ্রিল থেকে প্রচলিত ধারার সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে ১৮ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ১০ শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। নতুন নির্দেশনায় এক শতাংশ কমায় আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে ১৭ শতাংশ এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৯ শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হবে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্যাকেজগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্যাকেজ-১ : ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ৩০ হাজার কোটি ঋণ সুবিধা, প্যাকেজ-২ : ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান, প্যাকেজ-৩ : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো এবং প্যাকেজ-৪ : ‘প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম’ নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন তহবিল চালু করবে, যেখান থেকে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে।
এর আগে, গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ) আকার বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডালার ও ঋণের সুদহার কমানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে এ তহবিল থেকে মাত্র দুই শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন রফতানিকারকরা।
এসআই/এফআর/পিআর