ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

চা-সিগারেটের দামে মিলছে ব্যাংকের শেয়ার!

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২০

গলির টঙ দোকানেও পাঁচ টাকার নিচে মেলে না এক কাপ চা। পাঁচ টাকার নিচে কোনো সিগারেটও পাওয়া যায় না। অর্থাৎ এক কাপ চা ও একটি সিগারেট কোনো অবস্থাতেই ১০ টাকার নিচে পাওয়া সম্ভব নয়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে এক কাপ চা ও একটি সিগারেটের পেছনে যে অর্থ খরচ হয় তার থেকেও কম দামে শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকের শেয়ার কেনা সম্ভব। তাও একটি বা দু’টি ব্যাংকের শেয়ার নয়, অন্তত দুই হালি ব্যাংকের শেয়ার এমন দামে বিক্রি হচ্ছে।

নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে এমন করুণ দশা বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতে নানা অনিয়মের তথ্যে বেরিয়ে এসেছে সত্য। তারপরও শেয়ার দাম এতে নিচে নেমে যাওয়ার মতো খারাপ অবস্থায় যায়নি দেশের ব্যাংক খাত। মূলত বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে ব্যাংকের শেয়ার দামে এমন করুণ দশা বিরাজ করছে।

তাদের মতে, ব্যাংক খাতের শেয়ার দামের দুরবস্থার কারণে সার্বিক শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে যে টানা দরপতন হয়েছে, সেখানেও ব্যাংক খাতের দুরবস্থার ভূমিকা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরিচালকরা কম দামে তাদের ব্যাংকের শেয়ার কেনার উদ্যোগ নিতে পারেন। এতে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের ওপর আস্থা বাড়বে।

এদিকে শেয়ারবাজার ভয়াবহ দরপতনের কবলে পড়লে গত ১৯ মার্চ নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন এই নিয়মের কারণে শেয়ার দাম নতুন করে আর কমতে পারছে না।

এরপরও তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ৮টির শেয়ার দাম ফেস ভ্যালু ১০ টাকার নিচে অবস্থান করছে। আর ৯টি ব্যাংকের শেয়ার দাম ফেস ভ্যালুর কাছাকাছি অবস্থান করছে। শেয়ারের দাম ২০ টাকা বা তার বেশি আছে মাত্র ৯টির।

সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়মে, গত ১৯ মার্চ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শেষ পাঁচ কার্যদিবসের ক্লোজিং প্রাইসের গড় মূল্য দিয়ে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এই নির্ধারণ করে দেয়া ফ্লোর প্রাইসের নিচে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমতে পারবে না।

ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে যাওয়া ব্যাংকগুলোর শেয়ার দামের চিত্র-

ব্যাংকের নাম

শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস

শেয়ারের বর্তমান দাম

এবি ব্যাংক

৬ টাকা ৭০ পয়সা

৮ টাকা

এক্সিম

৮ টাকা ৬০ পয়সা

৯ টাকা ৬০ পয়সা

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

৮ টাকা ২০ পয়সা

৮ টাকা ৮০ পয়সা

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক

২ টাকা ৮০ পয়সা

৩ টাকা

আইএফআইসি

৮ টাকা ৬০ পয়সা

৯ টাকা ১০ পয়সা

এনবিএল

৬ টাকা ৮০ পয়সা

৭ টাকা ২০ পয়সা

ওয়ান ব্যাংক

৮ টাকা ৭০ পয়সা

৯ টাকা ৪০ পয়সা

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক

৭ টাকা ৯০ পয়সা

৮ টাকা ৮০ পয়সা

এদিকে বর্তমানে সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এর মধ্যে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারিত হয় ১১ টাকা ৩০ পয়সা। ২৫ মার্চ লেনদেন শেষেও কোম্পানিটির শেয়ার দাম ১১ টাকা ৩০ পয়সাতেই রয়েছে। এছাড়া ট্রাস্ট ব্যাংকের ২৪ টাকা ৪০ পয়সা এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ৩১ টাকা ৯০ পয়সায় আটকে রয়েছে শেয়ার দাম। এই তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কোনো অবস্থাতেই আর কমতে পারবে না। তবে দাম বাড়ার সুযোগ আছে।

অন্য ব্যাংকগুলোর চিত্র-

ব্যাংকের নাম

শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস

শেয়ারের বর্তমান দাম

ঢাকা ব্যাংক

৯.৯০

১০.৬০

প্রিমিয়ার ব্যাংক

৯.৯০

১০.৭০

এনসিসি

১১.৫০

১২.০

এসআইবিএল

১১.৮০

১২.১০

ইউসিবি

১১.৭০

১২.৬০

মার্কেন্টাইল

১০.৬০

১২.৭০

প্রাইম ব্যাংক

১৪.২০

১৪.৬০

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক

১৪.৭০

১৪.৮০

ব্যাংক এশিয়া

১৬.২০

১৬.৫০

ইসলামী ব্যাংক

১৬.৭০

১৬.৯০

যমুনা ব্যাংক

১৬.০০

১৭.০

সিটি ব্যাংক

১৬.২০

১৭.১০

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক

১৯.২০

২০.০

পূবালী ব্যাংক

২০.৫০

২০.৭০

ট্রাস্ট ব্যাংক

২৪.৪০

২৪.৪০

রূপালী ব্যাংক

২৪.৪০

২৪.৫০

এমটিবি

২৪.১০

২৪.৭০

উত্তরা ব্যাংক

২৩.৭০

২৬.২০

ইবিএল

৩০.৯০

৩১.১০

ডাচ বাংলা

৫৬.৯০

৫৮.৮০

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, ব্যাংক নিয়ে অনেক নেতিবাচক সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। বিশাল অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। পরিচালকরা পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ আছে। এসব কারণে ব্যাংকের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারপরও আমি মনে করি বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম যে পর্যায়ে নেমেছে এত নিচে নামা যুক্তিসঙ্গত নয়।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম হয়েছে সত্য। তবে দেশের ব্যাংক খাত এত খারাপ হয়ে যায়নি যে এভাবে শেয়ারের দরপতন হবে। এখনো ব্যাংক খাতই দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। মূলত বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসলে অবশ্যই তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো একের পর এক বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ার বাড়িয়েছে। সেই শেয়ার তারা বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করেছেন। এখন ব্যাংকের শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। পরিচালকদের উচিত এখন কম দামে বাজার থেকে নিজ ব্যাংকের শেয়ার কেনা। একজন পরিচালক যদি ৫০টি করেও শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবেন। শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এমএএস/এমএফ/এমএস