ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

করোনাভাইরাসে কোন খাতে কত ক্ষতি

মেসবাহুল হক | প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ০২ মার্চ ২০২০

>> সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শঙ্কা তৈরি পোশাক খাতে
>> সরকারের বিশেষ নীতি সহায়তা চায় এফবিসিসিআই
>> ফিনিশড লেদারে সম্ভাব্য ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকা
>> কাঁচামাল সংকটে হুমকির মুখে প্লাস্টিক শিল্প

করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কাঁচামাল সংকটে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায়ও উৎপাদন সংকুচিত হয়ে আসছে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে কোনো কোনো খাতে উৎপাদন নেমে আসবে শূন্যের কোটায়। কিছু খাত রয়েছে চরম হুমকির মুখে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনটি বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠিয়েছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এ প্রতিবেদনে বেশকিছু খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে। আবার কিছু কিছু খাতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে, এ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সরকারের নীতিসহায়তা চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন- এফবিসিসিআই

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত- সব দেশের বাণিজ্যে এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশে আমদানি করা প্রাথমিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও সম্পূর্ণায়িত পণ্যের সিংহভাগ চীন থেকে আমদানি করা হয়। করোনাভাইরাসের ফলে চীনের স্থানীয় উৎপাদন থেকে শুরু করে রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের বাণিজ্যে ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে

corona_busines

কমিশন বলছে, দেশের বাণিজ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ তারা করছে। এর আগেই বাংলাদেশের যেসব খাতে করোনার সম্ভাব্য প্রভাব রয়েছে তা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কর্তৃক পর্যালোচনা করে সাময়িক প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রভাবের খাতভিত্তিক পর্যালোচনা করা হয়। এতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণও উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো তুলে ধরা হলো-

ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডস শিল্প

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডস শিল্প মোট যে পরিমাণ রফতানি করে তার মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ রফতানি করা হয় চীনে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

corona_busines

গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স শিল্প

গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং খাতে বার্ষিক চার বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল দরকার হয়। যার ৪০ শতাংশ চীন থেকে আসে। কাঁচামালের প্রাপ্তি বিঘ্নিত বা সংকুচিত হবে বা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় এ শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, প্রায় এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস শিল্প

চীন থেকে কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস খাতে প্রতি মাসে আমদানির পরিমাণ ২০০ কন্টেইনারেরও বেশি। যার মূল্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। বর্তমানে চীন থেকে এসব পণ্য আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে।

তৈরি পোশাকের ওভেন খাত

ওভেন খাতের প্রায় ৬০ শতাংশ ফেব্রিক্স চীন থেকে আমদানি হয়। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হবে। তবে এখনও সেটি নিরূপণ সম্ভব হয়নি। ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলমান।

তৈরি পোশাকের নিট খাত

নিট খাতের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। এছাড়া নিট ও ডাইং কেমিক্যাল এবং অ্যাক্সেসরিজের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ আমদানি হয় চীন থেকে। এ খাতেরও ক্ষতি নিরূপণের বিষয়টি চলমান।

corona_busines

লাইভ অ্যান্ড চিলড ফুড শিল্প

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুচে রফতানি বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ কাঁকড়া ও কুচে চীনে রফতানি হয়। স্থানীয় বাজারে এসব পণ্যের কোনো চাহিদা নেই। তাই পণ্যগুলো রফতানি করতে না পারায় গত এক মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকার জীবন্ত কাঁকড়া ও কুচে মারা গেছে। মজুত করা পণ্য রফতানি করতে না পারলে ক্ষতির পরিমাণ ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

প্লাস্টিক শিল্প

প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঁচামাল ও মেশিনারিজসহ বিভিন্ন মেশিনের স্পেয়ার পার্টস যেমন- ইনজেকশন মোল্ডিং, প্রিন্টিং, এক্সটরশন মেশিনের পার্টস চীন থেকে আনতে হয়। এসব পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ সেক্টর হুমকির সম্মুখীন।

ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স শিল্প

বাংলাদেশে আমদানি করা মেশিনারি ও স্পেয়ার পার্টসের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ চীন থেকে আসে। আমদানি ও জাহাজীকরণ বর্তমানে বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রম কমিশনে চলমান।

corona_busines

জুট স্পিনার্স শিল্প

জুট স্পিনার্স পণ্য চীনে রফতানির পরিমাণ বছরে আনুমানিক ৮১ হাজার মেট্রিক টন। যার মূল্য প্রায় ৫৩২ কোটি টাকা। চীনে রফতানি ও জাহাজীকরণ বর্তমানে বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রমও চলমান।

মুদ্রণশিল্প

বছরে প্রায় ১৮০ কোটি ডলারের মুদ্রণশিল্পের কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। বর্তমানে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার।

মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স

মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট চীন থেকে বার্ষিক প্রায় ২৫ কন্টেইনার আমদানি করতে হয়। বর্তমানে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রম চলমান।

চশমাশিল্প

চশমাশিল্পের কাঁচামাল মোট আমদানির (তৈরি পণ্য ও যন্ত্রাংশ) আনুমানিক ৯৫ শতাংশ চীন থেকে আসে। বর্তমানে চীন থেকে আমদানি ও জাহাজীকরণ বন্ধ আছে। এ খাতের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণের কার্যক্রমও কমিশনে চলমান।

corona_busines

কম্পিউটার ও কম্পিউটার অ্যাক্সেসরিজ শিল্প

কম্পিউটার খাত অনেকটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল। ইতোমধ্যে কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, অ্যাক্সেসরিজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে না।

ইলেকট্রনিক্স শিল্প

টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন, ওভেন, চার্জারসহ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ৮০ ভাগই আসে চীন থেকে। শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীসহ সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কাজ করছে সরকার।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাই বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের বিশেষ নীতিসহায়তা, ঋণসহায়তা চাওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে— উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমদানি দায় পরিশোধে দেরির কারণে কাউকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত না করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

এমইউএইচ/বিএ/এমএআর/পিআর