কিছু বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে চলতি বছরের শুরু থেকেই কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে মাশুল বাড়ানো হয়েছে। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবে মাশুল বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।
রোববার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এক্সপোর্ট রেডিনেস ফান্ড (ইআরএফ) বা রফতানি প্রস্তুতি তহবিল কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইআরএফ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসি৪জে প্রকল্পের একটি ম্যাচিংগ্রান্ট কর্মসূচি। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ইআরএফ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। এই কর্মসূচিটি বাংলাদেশের চারটি সম্ভাবনাময় খাতের রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করবে। এসব খাত হচ্ছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, প্লাস্টিক এবং হালকা প্রকৌশল পণ্য। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় পরিবেশগত, সামাজিক এবং গুনগত মান পূরণের জন্য যোগ্য ও আগ্রহী উদ্যোক্তাদের ম্যাচিং গ্র্যান্ট প্রদান করবে।
অনুষ্ঠানে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘ব্যবসা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া উচিত। চলতি বছরের শুরু থেকে কন্টেনার হ্যান্ডলিং মাশুল বাড়ানো হয়েছে। যেখান কষ্ট কমিয়ে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে, সেখানে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবে মাশুল বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।’
শেখ ফজলে ফাহিম আরও বলেন, ‘রফতানি কন্টেনারে তালার (লক) দাম ৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রথমে এটা রফতানির ক্ষেত্রে, পরবর্তীতে আমদানি-রফতানি সব ক্ষেত্রেই এটা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। এসব উদ্যোগ দুধের মধ্যে লেবু দেয়ার মতো। বাংলাদেশের উন্নতি করতে সব ধরনের বাধা দূর করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্তে মনে হয় না হাইয়ার লেভেল পর্যন্ত আলোচনা হয়। এ সিদ্ধান্তগুলো মিডলেভেল থেকেই নেয়া হয়। মোটা দাগে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বাধাগ্রস্থ করে ট্যারিফ বা নন-ট্যারিফ ব্যরিয়ার। আমার মনে হয় না এসব বাধা বিজনেস কমিউনিটির কেউ গ্রহণ করবে।’
চার খাতের রফতানি বাড়াতে ইআরএফ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তবে তিনি এ রকম প্রকল্পে আইসি, ফার্মাসিউটিক্যাল, সিরামিক, পাওয়ার সেক্টরসহ বিভিন্ন খাতকে আনার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি আমাদের জন্য রিসোর্স। বন্ডেড ওয়্যার হাউস, ব্যাক টু ব্যাক এলসির মতো পলিসি গ্রহণ করার জন্য এ খাত এগিয়ে গেছে।’
এসবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘তারপরও বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি নিচের দিকে যাচ্ছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে না পারা এবং পণ্যে বৈচিত্র্যতা আনতে না পারাই এর কারণ। তবে এসব বিষয় মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
জাফর উদ্দিন আরও বলেন, আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু আমি মনে করি এটা আরও বেশি হওয়া উচিত। আমরা বর্তমানে যে পদ্ধতিতে জিডিপি নির্ধারণ করি তাতে মেয়েদের গৃহস্থালীর কাজ ইনক্লুড নেই। মা-বোনদের কাজ এতে যুক্ত থাকলে জিডিপি আরও বেড়ে যেতো।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি জসিম উদ্দিন, ইআরএফ প্রকল্প পরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওবাইদুল আযম, ইআরএফের ডেপুটি টিম লিডার ইমদাদুল হক প্রমুখ।
এমইউএইচ/এনএফ/এমএস