সংকটে উসমানিয়া গ্লাস শিট
সংকটের মধ্যে পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি। বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়ে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি এফডিআর (স্থায়ী আমানত) ভেঙে ফেলেছে। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে লোকসানের মাত্রা। এখন সরকার নগদ অর্থ এবং নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ ইনস্টল (স্থাপন) না করলে কোম্পানিটির পক্ষে ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কোম্পানিটির ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে এমন অভিমত দিয়েছে নিরীক্ষক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিযোগীদের তুলনায় পুরাতন প্রযুক্তিতে গ্লাস শিট উৎপাদন করে উসমানিয়া গ্লাস শিট। এতে পণ্যের মান নিম্নমানের হলেও উৎপাদনে ব্যয় বেশি হয়। যে কারণে কয়েক বছর ধরে লোকসানের মধ্যে পতিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
উসমানিয়া গ্লাসের নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটি দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের তারল্য সংকটে রয়েছে। যে কারণে কোনো ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ কেনা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি এফডিআর ভেঙে ফেলেছে।
তারল্য সংকটের পাশাপাশি উসমানিয়া গ্লাস শিটের ফ্যাক্টরি উৎপাদনে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত সমস্যায় ভুগছে। নিরীক্ষক বলছে, কোম্পানিটির উৎপাদন প্রযুক্তি প্রতিযোগীদের তুলনায় পুরাতন। এতে কোম্পানির বিক্রির তুলনায় উৎপাদন ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের পরিচালন লোকসানে রয়েছে কোম্পানিটি।
কোম্পানিটির দুটি ইউনিটের মধ্যে ইউনিট-১ এর উৎপাদন ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে বন্ধ ছিল। এই ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬৭ লাখ স্কয়ার ফিট। একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও কোম্পানিটির স্টকে আগের পণ্য জমা রয়েছে।
এর কারণে হিসেবে নিরীক্ষক জানিয়েছে, বাজারে উসমানিয়া গ্লাস শিটের পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। যে কারণে কমেছে বিক্রি। ইউনিট-১ এর মেশিনারিজ মেরামত ছাড়া উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব না বলেও অভিমত দিয়েছে নিরীক্ষক।
কোম্পানিটির উৎপাদন ও বিক্রির তথ্য তুলে ধরে নিরীক্ষক অভিমত দিয়েছে, ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে উৎপাদন করা ৩২ লাখ স্কয়ার ফিট সাব-স্ট্যান্ডার্ড গ্লাস শিট ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে বিক্রি করা হয়েছে। এগুলোর উৎপাদন ব্যয় চার কোটি ৭১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করা হয় দুই কোটি ৫৪ লাখ ৮ হাজার টাকায়। ফলে দুই কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
কোম্পানিটির লোকসানের কারণ হিসেবে তিনটি বিষয়কে সামনে এনেছে নিরীক্ষক। এর মধ্যে একটি পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের থেকে বিক্রিয় মূল্য কম। অপর দুইটি হলো কাচাঁমালের মূল্য বৃদ্ধি এবং উচ্চ বিক্রয় কমিশন।
নিরীক্ষক জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। সরকার যদি নগদ অর্থ এবং নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ ইনস্টল করে সহযোগিতা না করে, তাহলে কোম্পানির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা করার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
এমএএস/এসআর/পিআর