১২ কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১২ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে এ কারসাজির তথ্য ওঠে এসেছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৯৬-এর ২১ ধারা এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন ১৯৯৩-এর ১৭(ক) ধারায় দেয়া ক্ষমতা বলে এ তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।
কারসাজি করা ১২ প্রতিষ্ঠান হলো- ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, এসএস স্টিল, ইনটেক লিমিটেড, সায়হাম টেক্সটাইল, সায়হাম কটন মিলস, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, আইসিবি এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগেই পেয়ে লেনদেন করার প্রমাণ উঠে এসেছে বিএসইসির তদন্তে। এছাড়া বাজার কারসাজি, সিরিজ অব ট্রেডিং, আচরণবিধি ভঙ্গ, অতিরিক্ত ঋণ প্রদান, অটো ক্লাইন্ট ট্রেড, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, শর্ট সেলিং, সার্কুলার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে আইন লঙ্ঘনের তথ্য ওঠে এসেছে।
এ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানের তহবিল উত্তোলন ও স্থানান্তর এবং লিংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার স্থানান্তর বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একই সঙ্গে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার পাবলিক মার্কেট থেকে স্পট মার্কেটে নিয়ে যাওয়া এবং মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ধারণ করা শেয়ার ফ্রিজ করাসহ আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৬৯৬তম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাইফুর রহমান জানান, তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আজ (বৃহস্পতিবার) কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি অ্যানফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এছাড়া মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক মুন্নু সিরামিক এবং মুন্নু জুট স্টাফলার্সের ধারণ করা শেয়ারগুলো তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত ফ্রিজ (শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, বন্ধকসহ সকল ধরনের লেনদেন বন্ধ) থাকবে।
পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বজিত দাস ও তার স্ত্রী, কাজী মো. শাহাদাত হোসাইন ও বি অ্যান্ড বি এস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মো. সাইফ উল্লাহ, হাসাম মো. সিরাজ, এ এস আহসান হাবিব চৌধুরী, মো. লুৎফুল গনি টিটো ও তার স্ত্রী এবং তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাতরং এগ্রো ফিশারিজের তহবিল উত্তোলন ও স্থানান্তর এবং লিংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার স্থানান্তর বন্ধ থাকবে। তবে এসব হিসাবধারী সেকেন্ডারি মার্কেটে নিয়মিতভাবে শেয়ার লেনদেন করতে পারবেন।
সাইফুর রহমান আরও জানান, মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার লেনদেন ও আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম এবং কর্পোরেট ডিক্লারেশনের মাধ্যমে মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক শেয়ার বিক্রি-সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে ও ডিএসইর দাখিল করা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মুন্নু সিরামিকস, মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অ্যানফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানো এবং মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার পাবলিক মার্কেট থেকে স্পট মার্কেটে লেনদেন স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এমএএস/আরএস/পিআর