আবার ইউনাইটেড এয়ারের ‘অস্বাভাবিক’ লম্ফঝম্ফ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুল আলোচিত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শেয়ার কিনতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। যে সব বিনিয়োগকারীদের কাছে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার আছে তাদের কেউ শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে ক্রেতা থাকলেও শেয়ারের বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরুর দাম ছিল ২ টাকা ২০ পয়সা। এর থেকে ২০ পয়সা কমিয়ে ২ টাকায় দরে প্রথমে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩১৫ শেয়ার ক্রয়ের আবেদন পড়ে। তবে কেউ এই দামে শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হননি।
এরপর ২ টাকা ১০ পয়সা দামে ৩ লাখ ১৩ হাজার শেয়ার ক্রয়ের আবেদন আসে। এ দামেও কেউ শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হননি। তারপর ২ টাকা ২০ পয়সা দরে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯৪টি শেয়ার ক্রয়ের আবেদন আসে। তবে এ দামেও কেউ শেয়ার বিক্রি করতে চায়নি। ফলে মাত্র ৩টি ক্রয় আবেদনেই শেয়ার দাম বেড়ে সার্কিট বেকারে (দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা) চলে আসে। এরপরও কোম্পানিটির শেয়ারের বিক্রেতা শূন্যই থেকে গেছে।
ডিএসসি তথ্য অনুযায়ী, এই কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাত্র ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৭০ দশমিক ২৬ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার আছে।
হঠাৎ হঠাৎ শেয়ারের দাম এমন বাড়লেও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম কয়েক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে। এমনকি কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার থেকে কয়েক’শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
১০০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০১০ সালে শেয়ারবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এরপর ২০১১ সালে রাইট শেয়ার ও ২০১০ সালে ৫ শতাংশ, ২০১১ সালে ১০ শতাংশ, ২০১২ সালে ১৫ শতাংশ, ২০১৩ সালে ১২ শতাংশ, ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ ও ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানিটি মূলধন বাড়ায়। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৮২৮ কোটি টাকায়।
২০১৫ সালের পর কোম্পানিটি আর কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে ২০১৫ সালের পর কোম্পানির কোনো তথ্যও নেই। ডিএসইর ওয়েবসাইটেও ২০১৫ সালের পর তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি। সর্বশেষ সাধারণ সভা হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, কোম্পানিটির পরিচালকরা ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে তাদের হাতে থাকা কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ২০১২ সালে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ দশমিক ০২ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানি থেকে প্রায় ৮২৪ কোটি ২২ লাখ টাকা তুলে নেন।
২০১০ সালের তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানির পরিচালকদের হাতে থাকা ৫০ শতাংশ শেয়ারের ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেন। ওই বছরে শেয়ারের গড় দাম ছিল ৪৬ দশমিক ৪০ পয়সা। সেই হিসাবে পরিচালকরা প্রায় ৭৬৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পুঁজিবাজার থেকে তুলে নেন।
পরের বছর ২০১২ সালে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ শেয়ার ২৩ দশমিক ৭০ টাকা গড় দামে বিক্রি করে তারা উঠিয়ে নেন প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এরপর ২০১৩ সালে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ার ২০ দশমিক ৩১ টাকা গড় দামে ৪৫ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ৯ দশমিক ৯২ টাকা গড় দামে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা তুলে নেন।
আর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার গড় ৬ টাকা দামে বিক্রি করেন। সব মিলে তালিকাভুক্তির পর মাত্র পাঁচ বছরে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০টি শেয়ার বিক্রি করেন উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা।
এমএএস/জেএইচ/জেআইএম