১ সেপ্টেম্বর রফতানি ট্রফি পাচ্ছে ৬৬ প্রতিষ্ঠান
২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পাঁচটিসহ ৬৬ প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় রফতানি ট্রফি’ দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব তপন কান্তি ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে ৬৬টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জাতীয় রফতানি ট্রফি অর্জন করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে এসব ট্রফি তুলে দেবেন।
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনের জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রাপ্তির তালিকা অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রফতানিকারক ৬৬ প্রতিষ্ঠানকে এসব ট্রফি দেয়া হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এর আগেও ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরেও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ট্রফি পেয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সম্মিলিতভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রফতানি করে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বর্ণপদক পেতে যাচ্ছে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। এর আগের কয়েক অর্থবছরও এই পদক পায় প্রতিষ্ঠানটি।
জাতীয় রফতানি ট্রফি নীতিমালা অনুসারে এবার তৈরি পোশাক (ওভেন ও নিটওয়্যার), সব ধরনের সুতা, টেক্সটাইল ফেব্রিক্স, হোম স্পেশালাইজড ও টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কাঁচাপাট, পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, ফুটওয়্যার, কৃষিজাত পণ্য (তামাক বাদে), কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ফুল ও ফলিয়েজ, হস্তশিল্পজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক সামগ্রী, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, অন্যান্য শিল্পপণ্য, ওষুধ, কম্পিউটার সফটওয়্যার, প্যাকেজিং ও অ্যাকসেসরিজ পণ্য এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলভুক্ত (ইপিজেড) শতভাগ দেশি মালিকানার কারখানাসহ মোট ২৮টি শ্রেণিতে এই পদক দেয়া হবে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের সেরা রফতানিকারক হিসেবে এগ্রো প্রসেসিং পণ্য (তামাকজাত পণ্য ব্যতীত) রফতানিতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকের জন্য চূড়ান্ত হওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটিই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের। এর মধ্যে প্রাণ এগ্রো লিমিটেড স্বর্ণপদক এবং একই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে।
এছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডিউরেবল প্লাস্টিকস লিমিটেড ও অলপ্লাস্ট বাংলাদেশ লিমিটেড। পাশাপাশি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানিতেও রৌপ্য পদক পাচ্ছে একই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
এছাড়াও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশের খ্যাতিমান আরও ৬০ প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন শ্রেণিতে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক দেয়া হবে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান জাতীয় রফতানি ট্রাফি পাচ্ছে
তৈরি পোশাক (ওভেন) খাতে স্বর্ণপদক পাচ্ছে হা-মীম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড। একই খাতে ব্রোঞ্জ ট্রফিও পাচ্ছে হা-মীম গ্রুপের দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড। এ খাতে রৌপ্যপদক পাচ্ছে এ কে এম নিটওয়্যার।
তৈরি পোশাকের নিটওয়্যার খাতে স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে স্কয়ার ফ্যাশনস, রৌপ্য ট্রফি পাচ্ছে ফোর এইচ ফ্যাশনস আর ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইলস পাচ্ছে ব্রোঞ্জ ট্রফি। সব ধরনের সুতা রফতানি খাতে বাদশা টেক্সটাইলস পাচ্ছে স্বর্ণ ট্রফি। আর কামাল ইয়ার্ন রৌপ্য ও ম্যাকসন স্পিনিং পাচ্ছে ব্রোঞ্জ ট্রফি। টেক্সটাইল ফেব্রিকস খাতে এনভয় টেক্সটাইল স্বর্ণ, ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং রৌপ্য ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে। টেরিটাওয়েল খাতে নোমান টেরিটাওয়েল মিলস স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে। এ খাতে আর কোনো ট্রফি দেয়া হয়নি। হিমায়িত খাদ্য খাতে সী মার্ক (বিডি) স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে। আর ব্রাইট সী ফুডস রৌপ্য ও বিডি সী ফুডস পাচ্ছে ব্রোঞ্জ ট্রফি।
পাটজাত দ্রব্য খাতে আকিজ জুট মিলস পাচ্ছে স্বর্ণ, জনতা জুট মিলস রৌপ্য আর করিম জুট স্পিনার্স ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে। ক্রাস্ট বা ফিনিশড চামড়া খাতে এস এ এফ ইন্ডাস্ট্রিজ স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে। পিকার্ড বাংলাদেশ চামড়াজাত পণ্য রফতানি খাতে স্বর্ণ ও বিবিজে লেদার গুডস রৌপ্য ট্রফি পাচ্ছে। সব ধরনের পাদুকা রফতানি খাতে স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে বে ফুটওয়্যার। আর এফবি ফুটওয়্যার রৌপ্য ও ফুডবেড ফুটওয়্যার ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে।
কৃষিপণ্য (তামাক ব্যতীত) রফতানি খাতে স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে মনসুর জেনারেল ট্রেডিং, রৌপ্য পাচ্ছে এলিন ফুডস এবং হেরিটেজ এন্টারপ্রাইজ পাচ্ছে ব্রোঞ্জ ট্রফি। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানিতে প্রাণ এগ্রো স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে। এলিন ফুড পাচ্ছে রৌপ্য আর হবিগঞ্জ এগ্রো ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে। ফুল ফলিয়েজ খাতে রাজধানী এন্টারপ্রাইজ স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে। হস্তশিল্প পণ্য রফতানিতে কারুপণ্য রংপুর স্বর্ণ, বিডি ক্রিয়েশন রৌপ্য ও ক্লাসিক্যাল হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে বেঙ্গল প্লাস্টিকস স্বর্ণ, ডিউরেবল প্লাস্টিকস রৌপ্য ও অলপ্লাস্ট ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে। সিরামিক খাতে শাইনপুকুর সিরামিকস পাচ্ছে স্বর্ণ ট্রফি।
হালকা প্রকৌশল পণ্য রফতানিতে ইউনিগোরি সাইকেল স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে। রংপুর মেটাল রৌপ্য ও মেঘনা রাবার পাচ্ছে ব্রোঞ্জ ট্রফি। ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস পণ্য রফতানিতে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং স্বর্ণ ও বিআরবি কেবল রৌপ্য ট্রফি পাচ্ছে। মেরিন সেফটি সিস্টেম ও বিএসআরএম স্টিল অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য খাতে স্বর্ণ ও রৌপ্য ট্রফি পাচ্ছে। ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রফতানিতে স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এ খাতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস পাচ্ছে রৌপ্য ট্রফি। কম্পিউটার সফটওয়্যার রফতানিতে সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে।
ইপিজেডের শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক রফতানিতে ইউনিভার্সেল জিন্স স্বর্ণ, প্যাসিফিক জিন্স রৌপ্য ও জিন্স ২০০০ ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে। ইপিজেডভুক্ত শতভাগ দেশি মালিকানার অন্যান্য পণ্য ও সেবা খাতে ফারদিন এক্সেসরিজ স্বর্ণ, শাশা ডেনিমস রৌপ্য ও আরএম ইন্টারলাইনিংস ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে। প্যাকেজিং ও এক্সেসরিজ খাতে মন ট্রিমস স্বর্ণ, ইউনিগোরি পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং রৌপ্য এবং জাবের অ্যান্ড জুবায়ের এক্সেসরিজ ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে।
অন্যান্য প্রাথমিক পণ্য রফতানিতে স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে অর্কিড ট্রেডিং, রৌপ্য পাচ্ছে বাং চুং ট্রেড অ্যান্ড ট্যুরিজম আর বেঙ্গল পলি অ্যান্ড পেপার স্যাক ব্রোঞ্জ ট্রফি পাচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সেবা রফতানিতে মীর টেলিকম স্বর্ণ ট্রফি পাচ্ছে। নারী উদ্যোক্তা ও রফতানিকারকদের জন্য সংরক্ষিত খাতে মুন্নু সিরামিকস স্বর্ণ ও নিহাও ফুড কোম্পানি রৌপ্য ট্রফি পাচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রফতানি বাণিজ্যে উৎসাহ দেয়া এবং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশে বিভিন্ন খাতে রফতানি পদক দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে রফতানি আয়, আয়ের প্রবৃদ্ধি, নতুন পণ্য সংযোজন, নতুন বাজার ও পরিবেশসম্মত উৎপাদন পরিবেশকে বিবেচনায় নেয়া হয়। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি এসব সূচক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জাতীয় রফতানি ট্রফির জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করে। ইপিবি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), এফবিসিসিআইসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী চেম্বারের প্রতিনিধিরা কমিটিতে রয়েছেন।
এমইউএইচ/বিএ/এমএস
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - অর্থনীতি
- ১ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি
- ২ লক্ষ্মীপুরে জুয়েলারি ব্যবসায়ী হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দাবি বাজুসের
- ৩ বিজিএমইএ প্রশাসক-তাইওয়ান টেক্সটাইল ফেডারেশন প্রতিনিধিদলের বৈঠক
- ৪ সর্বাধুনিক মেশিনে আটা-ময়দা-সুজি উৎপাদন শুরু করলো প্রাণ
- ৫ রোববার থেকে ঢাকার ১৩ স্থানে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রি