রোববার শুরু শেয়ারবাজারের লেনদেন, নতুন প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা
ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ৯ দিন বন্ধ থাকার পর আগামীকাল রোববার থেকে আবার দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে দরপতনের মধ্যে থাকলেও ঈদের আগের শেষ কার্যদিবসে কিছুটা উত্থানের দেখা মিলে। শেয়ারবাজারের এই ঊর্ধ্বমুখীতা সামনেও অব্যাহত থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কয়েক মাস ধরেই শেয়ারবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। টানা দরপতনে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে গেছে। এতে শেয়ারবাজারের প্রায় সব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী লোকসানের মধ্যে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার ঘুরে না দাঁড়ালে বিনিয়োগকারীদের পথে বসতে হবে।
গত ১২ আগস্ট ঈদুল আজহা পালিত হওয়ার কারণে সারকারিভাবে ১১, ১২ ও ১৩ আগস্ট সাধারণ ছুটি ছিল। তার আগের দু’দিন শুক্র ও শনিবার (৯ ও ১০ আগস্ট) হওয়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়নি। ফলে ৮ আগস্ট লেনদেন হওয়ার পর শেয়ারবাজারে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যায়।
ঈদের সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ১৪ আগস্ট (বুধবার) অফিস খোলা থাকলে এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন না করার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পর্ষদ। পরের দিন ১৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) জাতীয় শোক দিবসের ছুটি ছিল। শোক দিবসের ছুটির পর ১৬ ও ১৭ (শুক্র ও শনিবার) দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি। এর মাধ্যমে টানা ৯ দিন বন্ধ থাকে শেয়ারবাজারের লেনদেন।
টানা ৯ দিন বন্ধ থাকার পর এখন কেমন শেয়ারবাজার প্রত্যাশা করছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে বিনিয়োগকারী আরিফ হোসেন বলেন, কয়েক মাস ধরেই শেয়াবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। কিন্তু এই মন্দাভাবের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। দেশে কোনো হরতাল, অবরোধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই। আর্থনীতেও মন্দা নেই। তাহলে শেয়ারবাজারে কেন মন্দা থাকবে? কোনো চক্র পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজার নিয়ে খেলছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে বাজার যেভাবে পড়েছে তাতে আমার বিনিয়োগ করা অর্থের অর্ধেকের বেশি নেই হয়ে গেছে। এখন যদি বাজার ভালো না হয়, তাহলে পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। আর শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে যে অর্থ হারিয়েছি, তা ফিরে পেতে শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখীতার প্রয়োজন। টানা ঊর্ধ্বমুখী ছাড়া লোকসান কাভার করা যাবে না।
খায়রুল হোসেন নামের আর এক বিনিয়োগকারী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে নীরব দরপতন হয়েছে তা ২০১০ সালের মহাধসের থেকে কোনো অংশ কম না। শেয়ারবাজারে এমন ভয়াবহ দরপতনের কোন যুক্তি সংগত কারণ নেই। আমাদের প্রত্যাশা সামনে বাজার ভালো হবে। এই বাজার ভালো হতেই হবে। তা না হলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে যাবে।
এদিকে ঈদের আগে শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি গণফোরামের পক্ষে থেকেও মানববন্ধন ও প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
ওই মানববন্ধন ও প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের অবিলম্বে বহিষ্কার ও গ্রেফতার দাবি জানিয়ে গণফোরামের পক্ষে থেকে অভিযোগ করা হয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
এরপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে দরপতনের প্রতিবাদে ব্যানার, ফেস্টুন এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ বন্ধের দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিগত কিছুদিন যাবত বাজার কিছুটা সংশোধনের ধারা অব্যাহত থাকায় স্বল্প সংখ্যক বিনিয়োগকারী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে ব্যানার, ফেস্টুন এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন। এ বিক্ষোভের ফলে দেশ ও বিদেশে আমাদের পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। পুঁজিবাজারের ধর্মই হলো উত্থান ও পতন। পুঁজিবাজারের ব্যাপ্তি বেড়েছে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই এ বাজারকে প্রভাবিত করতে পারবে সে ধারণাও সঠিক নয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে এর চেয়েও বেশি উত্থান-পতন হয় উল্লেখ করে বলা হয়, সেখানে কখনো ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন অথবা বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের উন্নত স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ উদীয়মান পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক তা আমাদের কাম্য নয়। এ ধরনের বিক্ষোভের ফলে নতুন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে অনুৎসাহিত হয়।
এমএএস/এসএইচএস/এমকেএইচ