২০০ কোটি টাকার চামড়া নিয়ে শঙ্কায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গত সাত দশকে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে ২০টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যেগুলো রয়েছে তারাও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বাকিতে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য। এর মধ্যে এবার কোরবানি ঈদে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়া নতুন করে বিপাকে পড়েছেন তারা। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন কাঁচা চামড়া ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও আশার আলো দেখছেন না চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের চামড়া আড়তদাররা জানান, গত বছর কোরবানির ঈদের চামড়া সংগ্রহের পর ঠিক মতো বকেয়া পরিশোধ করেননি ঢাকার ট্যানারি মালিকরা। শুধু তাই নয়, সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও এবার ইচ্ছা মতো দামে চামড়া কিনেছেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় নগদ অর্থ সংকটে চামড়া সংগ্রহে অনীহা দেখা দেয় চট্টগ্রামের আড়তদারদের। এতে কোটি কোটি টাকার কাঁচা চামড়া অবিক্রিত থাকায় লোকসান গুণছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া ব্যবসায়ীরা।
তবে এতকিছুর পরও চট্টগ্রামে দুইশ কোটি টাকারও বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। যা নিয়ে এখন আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে চামড়া কেনা শুরুর কথা থাকলেও শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ঢাকার ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের সাথে কোনো যোগাযোগ না করায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের দিন থেকে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা বিপুল পরিমাণ চামড়া বিক্রি করে টাকা উঠানো যাবে কি না -তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা।
গত দুই বছর ধরে আটকে থাকা টাকা যেখানে উদ্ধার হয়নি, সেখানে নতুন করে টাকা পাওয়ার হিসেব আরও লম্বা হয় কি-না তা নিয়ে তারা চিন্তিত।অন্যদিকে এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বন্ধ হওয়া ট্যানারিগুলো চালুর দাবি জানিয়েছেন আড়তদাররা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ট্যানারিগুলো যদি বিশেষ ব্যবস্থায় চালু করা যায় তাহলে চামড়া সংকটের কিছুটা সুরাহা হবে।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মোসলেম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় ট্যানারির কাছে চামড়া বিক্রি করলে নগদ টাকা পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে এক সময় ২২টি ট্যানারি ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এসব ট্যানারির সিংহভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে দুটি ট্যানারি থাকলেও ইটিপি না থাকায় পরিবেশ অধিদফতরের নিষেধাজ্ঞায় একটি (মদিনা ট্যানারি) বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকার ট্যানারিগুলোই এখন চট্টগ্রামের আড়তদারদের প্রধান ভরসা।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করলে টাকা বাকি থাকে। টাকা পেতে পেতে আরেক কোরবানি এসে আসে। কয়েক বছর ধরে কোরবানিতে লোকসান দিতে দিতে পুঁজি হারিয়েছি আমরা। প্রতি কোরবানিতে আমরা ধার করে টাকা নিয়ে বা বাকিতে চামড়া ক্রয় করে থাকি। ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা নগদ টাকা দিয়ে দিলে আমরা উপকৃত হতাম।’
মোসলেম উদ্দিন জানান, চট্টগ্রামের ১১২ জন তালিকাভুক্ত আড়তদারের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি এবার চামড়া কিনেননি। গুদামসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকলেও ক্যাশ টাকার অভাবে তারা চামড়া কিনতে পারেননি। চট্টগ্রামে এবার ছয় লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ পিস চামড়া নষ্ট হলেও বাকি সাড়ে চার লাখ পিস চামড়া বিভিন্ন আড়তদাররা কিনেছেন। গ্রামেগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও বেশ কিছু চামড়া কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছেন। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করলে এসব চামড়া নগরীতে চলে আসবে। কিন্তু তারা (ঢাকার ট্যানারি মালিক) এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেননি।
নগরের আতুরার ডিপু এলাকার চামড়া আড়তদার সানোয়ার আহমেদ। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘চামড়া পচনশীল সম্পদ। সিটি কর্পোরেশন নগরের বিভিন্ন স্পট থেকে পচে যাওয়া প্রায় এক লাখ চল্লিশ হাজার পিস চামড়া অপসারণ করেছে। ঈদের দিন চামড়াগুলো সংগ্রহ না করলে নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু এখন চামড়া কিনে চিন্তায় আছি। চামড়াগুলো তারা কিনবেন নাকি আবারও আমাদেরকে বাকিতে দিয়ে আসতে হবে -তা বুঝতে পারছি না। এবারও যদি ঢাকার ট্যানারি মালিকদের বাকিতে চামড়া দিতে হয় তাহলে আগামী বছর হয়তো চট্টগ্রামের কোনো আড়তদার চামড়া কিনবেন না।’
বৃহত্তর চট্টগ্রাম চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকার অধিকাংশ ট্যানারি মালিকই চামড়া নেয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা দেন না। ২০১৮ সালের নেয়া চামড়ার প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ কারণে এবার আমরা চামড়া সংগ্রহ করতে পারিনি। এতকিছুর পরও প্রায় সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। বিপুল পরিমাণ এ চামড়া সংরক্ষণ এবং বিক্রি করার মতো অবকাঠামো চট্টগ্রামে নেই। ঢাকার ট্যানারি মালিকেরাও কোনো যোগাযোগ করছেন না। এ অবস্থায় আমাদেরকে কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে -তা এখনো বুঝতে পারছি না।’
আরএস/পিআর