ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

মেঘের আড়ালে আলো খুঁজছেন বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৯

টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতিও। এতে গত কয়েকদিন যে অন্ধকার মেঘ শেয়ারবাজারের আকাশে আড়ালে লুকিয়ে ছিল এখন তার পেছনেই আলো খুঁজছেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়ায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক কয়েকটি ব্যাংকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরামর্শ দেয়ায় বাজার পতনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, ব্যাংক খাত দুরবস্থার মধ্যে থাকলেও শেয়ারবাজারে এখনও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়লে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার ব্যাংক শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ালে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০টি ব্যাংকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এমন নির্দেশ দেয় না। শেয়ারবাজারের চলমান এ মন্দা অবস্থার মধ্যে এটি বিরাট বড় ঘটনা। তারই প্রভাব দেখা যাচ্ছে শেয়ারাবাজারে।

গত সোমবার প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থ ছাড়লে তা বিনয়োগের জন্য শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো অফার লেটার পেয়েছে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বিএসইসির এ উদ্যোগ নেয়ার পর মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ১১১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সংবাদ আসে শেয়ারবাজারে নির্ধারীত সীমার নিচে বিনিয়োগ থাকা ২০টি ব্যাংককে বিনিয়োগ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এমন সংবাদের পর বৃহস্পতিবারও শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে। অপর দু’টি সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৩ পয়েন্টে।

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করার পর বাজার খারাপ হওয়ার কথা না। কিন্তু একটি গ্রুপ সিন্ডিকেট করে বাজারে পরিকল্পিত দরপতন ঘটিয়েছে। এ গ্রুপটি কম দামে শেয়ার কেনার পাঁয়তারা চালিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দরপতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে আমরা আগে যে দাবি জানিয়েছি সেই দাবিতে অনড় আছি। তবে প্রণোদনা স্কিমের টাকা ছাড়ের উদ্যোগ নেয়ায় বাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় আমরা আমাদের দাবি থেকে সরে আসব।’

বিনিয়োগকারী মো. সোহাগ বলেন, ‘টানা পতনের কবলে পড়ে শেয়ারবাজার খাদের কিনারে চলে গিয়েছিল। এখন কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে, এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু দু’দিনের উত্থানেই হারানো পুঁজি ফিরে পাওয়া যাবে না। বিনিয়োগকারীদের লোকসান কাটাতে অন্তত এক মাস বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকতে হবে। টানা পতনে বাজার যে অন্ধকার মেঘের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল, আমরা এখন সেই মেঘের পিছনে আলো খোঁজার চেষ্টা করছি। আশা করি, সামনে বাজার ভালো হবে।’

মূল্য সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৪৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ৭১টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির।

মূল্য সূচক ও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন খরা কাটিয়ে ওঠারও আভাস মিলছে। ডিএসইতে দিনভর লেনদেন হয়েছে ৪৬৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ৮৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, বাজারে যেভাবে দরপতন হয়েছে তাতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি কারও কাম্য ছিল না। বাজার এমন করুণ অবস্থার মধ্যে পড়লেও, তারল্যের কোনো ঘাটতি ছিল বলে মনে হয় না। মূলত বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে এ পরিস্থির সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, প্রণোদনা স্কিমের টাকা ছাড়ের জন্য বিএসইসি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। আবার গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে ২০টি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এমন সংবাদে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চর হয়েছে। যার প্রভাব এখন আমরা বাজারে দেখতে পাচ্ছি।

এদিকে পতন কাটিয়ে ডিএসইর মতো বড় উত্থানে ফিরেছে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই)। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭১৩ পয়েন্টে। বাজারটিতে হাত বদল হওয়া ২৮৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২০৫টির, কমেছে ৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির দাম। লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

এমএএস/এনডিএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন