প্রণোদনা স্কিমের টাকার খবরে শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়ার পর মঙ্গলবার দেশের শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়েছে।
এতে একদিনেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে ১০০ পয়েন্টের ওপর। দাম বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।
হঠাৎ এমন উল্লম্ফন হলেও কয়েক মাসে ধরেই শেয়ারবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এমনকি রবি ও সোমবার পরপর দুদিন শেয়ারবাজারে বড় দরপতন ঘটে। ভয়াবহ ওই দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিএসইসি।
সেই সঙ্গে সোমবার প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থ ছাড় করলে তা বিনিয়োগের জন্য শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো অফার লেটার পেয়েছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বিএসইসি এ উদ্যোগ নেওয়ার পর মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের দেখা মিললো। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৭ পয়েন্টে। অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। শরিয়াহ সূচক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে।
সূচকের এমন বড় উত্থানের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, আতঙ্কের কারণে গত কয়েক দিন শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এমন দরপতনের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ার জন্য বিএসইসি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও আস্থা বেড়েছে। এ কারণেই বাজারে এমন বড় উত্থান দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। দু-একটি কোম্পানি হয় তো খারাপ করেছে। কিন্তু তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি খারাপ নয়। এখানে ভালো ভালো দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি আছে। পিপলস লিজিংয়ের মতো দু-একটি কোম্পানির জন্য তালিকাভুক্তকে খারাপ বলা যাবে না।
মূল্য সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি প্রতিদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে মাত্র ১৫টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টির।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিষয়ে বিনিয়োগকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন যে হারে দাম কমেছে তাতে একদিনের উত্থানে কিছু হবে না। টানা পতনে ইতোমধ্যে যে লোকসান হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে হলে কমপক্ষে এক মাস শেয়ারবাজার টানা উর্ধ্বমুখী থাকতে হবে।
এদিকে মূল্য সূচক ও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এবং ইউনিটের দাম বাড়লেও লেনদেন খরা অব্যাহত রয়েছে। ডিএসইতে দিনভর লেনদেনে হয়েছে ৩১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৬৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন কমেছে ১৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
ডিএসইর মতো বড় উত্থান হয়েছে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৯৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫১৩ পয়েন্টে। বাজারটিতে হাতবদল হওয়া ২৮৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩০টির, কমেছে ৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির দাম। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এমএএস/এনএফ/জেআইএম