বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মন্থর
তারল্যে সংকট, উচ্চ সুদহারসহ নানা কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের অবস্থা নাজুক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে কমতে থাকা ঋণ প্রবৃদ্ধি মে শেষে ১২ দশমকি ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, বেসরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি রয়েছে। এর মূল কারণ ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তারল্য নেই। ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) নতুন সীমায় নামিয়ে আনারও চাপ রয়েছে। আবার আমানতের প্রবৃদ্ধি কম থাকায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দিতে পারছে না। এছাড়া ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদহারে ঋণ নিতে যাচ্ছে না। এসব কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে বেসরকারি খাতের ঋণ হু হু করে বাড়ছিল। ফলে ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে গত বছরের শুরুতেই ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কিছুটা কমিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার পর থেকে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। এরপর কয়েক দফা এডিআর সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো হলেও, নানা কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। নিম্নমুখীর ধারা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন>> ঋণখেলাপি হলেই খারাপ মানুষ নয় : শিল্পমন্ত্রী
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের মে মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এপ্রিলে যা ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং মার্চ শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
গত মে মাস শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯১৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় শেষে ঋণ ছিল ৮ লাখ ৯২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে আগামী জুন নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর আগে প্রথমার্ধে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও অর্জিত হয় মাত্র ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
আরও পড়ুন>> শেয়ারবাজারের দুরবস্থা বাড়িয়েছে ব্যাংক
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমানত কমেছে। খেলাপির ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চিতি হিসাবে বাড়তি টাকা জমা রাখতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণ দেয়ার মত পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এছাড়া বেশি সুদে ঋণ নিতে চাচ্ছে না উদ্যোক্তারা। অবকাঠামোগত সমস্যা আছে। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কম।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি উল্লেখ করে সাবেক এ গভর্নর বলেন, কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাই বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত ঋণ জোগান দেয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।
এসআই/এমএসএইচ/এমএস