শেয়ার কেলেঙ্কারি : রায়ের আগে আসামিদের জামিন দিলেন ট্রাইব্যুনাল
পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ সালের প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলা রায় ঘোষণার দিন আগামী রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) নির্ধারণ করেছেন শেয়ারবাজার বিষয়ক বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার দুই কার্যদিবস আগে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরী জামিন পেয়েছেন। এ নিয়ে এই মামলার অভিযুক্ত সব আসামিই জামিন পেলেন।
বুধবার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন সাঈদ এইচ চৌধুরী। এ সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। বুধবার ট্রাইবুনালে আসামি পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মো. সিরাজুল হক, সৈয়দ মাহমুদুল হাসান ও পান্নু খান উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বাদী বিএসইসির পক্ষে প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল ও প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগের দিন মঙ্গলবার প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ রউফ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান, পরিচালক আনু জাগিরদার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক হুমায়ুন কবীর তাদের জামিন আগামী রোববার পর্য্ন্ত মঞ্জুর করেন। এর আগে শেয়ার কেলেঙ্কারি এ মামলাটির রায়ের দিন আগামী রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) নির্ধারণ করেন স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর।
মামলার বাদী বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক এমএ রশিদ খান। তিনি ছাড়াও এ মামলায় সাক্ষী দিয়েছেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর জহুরুল হক, প্রফেসর আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রুহুল খালেক ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন।
বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, আসামিরা ১৯৯৬ সালে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার অপারেট করেছেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিচারক মামলাটির রায় ঘোষণার দিন আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আসামিরা রায়ের আগেই আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন নিয়েছেন। সব আসামিদের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
জানা গেছে, প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার (মামলার পুরাতন নং ৩৫৯৮/৯৯, নতুন নং ২/১৫) কোম্পানিসহ ৫ আসামি। আসামিরা হলেন প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজ লিমিটেড, কোম্পানির চেয়ারম্যান এ রউফ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান, পরিচালক সাঈদ এইচ চৌধুরী ও আনু জাগিরদার।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা ১৯৯৬ সালের জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সু ও বেক্সিমকো ফার্মা কোম্পানির শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
কোম্পানিটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে কোম্পানিটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে। যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি। যার মধ্যে ফরেন ডিভিপি মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময় বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এইসব ফরেন ডিভিপি মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করত।
আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ১৭ ধারার ই (২) বিধান লংঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ এর ২৪ ধারায় আসামিদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
এসআই/এসএইচএস/বিএ