বর্ধিত কর প্রত্যাহার হতে পারে সঞ্চয়পত্রে
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সবধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্ধিত এ কর আরোপের প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বলা হচ্ছে, এ কর বৃদ্ধি সমাজের মধ্যবিত্ত, অবসরভোগী ও ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের আয়ের ওপর সরাসরি আঘাত করবে। এমনকি সংসদে এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের দুটি চিন্তা রয়েছে। এর একটি হচ্ছে বাজারে প্রচলিত সবধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে। অথবা শুধু পরিবারভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর তা প্রত্যাহার করা হবে।
সূত্র জানায়, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে সবধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর না কি শুধু পারিবারিক ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাসের দিন তথা ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ধিত কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করতে পারেন।
উল্লেখ্য, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র শুধু নারীরা ক্রয় করতে পারেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন অবসরভোগী চাকরিজীবীরা।
বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত একজন অবসরভোগী পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সর্বাধিক ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ বা ক্রয় করতে পারেন। বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী ৫ শতাংশ কর কর্তনের পর ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগের ওপর বার্ষিক মুনাফা পান ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কর্তন করা হলে তার মুনাফা ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে কমে হবে ৫ লাখ ২৯ হাজার ২০০ টাকা। সেই অবসরভোগী বার্ষিক ২৯ হাজার ৪০০ টাকা কম মুনাফা পাবেন।
এদিকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে মূল বাজেটে প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এই ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ পাঁচগুণেরও বেশি। প্রতি বছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কী পরিমাণ ঋণ নেবে তার একটি প্রক্ষেপণ বাজেটে উল্লেখ থাকে। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরে সরকারে পক্ষ থেকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির থাকা সম্ভব হয়নি। যেমন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ঋণ নেয়া হয় ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। অন্যান্য বছরেই একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই ২০১৮-এপ্রিল ২০১৯) সঞ্চয়পত্র থেকে নেট বিনিয়োগ এসেছে ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার এ সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা পুরো অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬৬ শতাংশ বেশি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের ১২ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। এর মধ্যে জুলাই-এপ্রিল সময়ে ঋণ এসেছে ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৬৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮১ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
এদিকে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়া নজরদারিও বাড়ানো হয়। তবে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করার পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেনি।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, একক মাস হিসেবে এপ্রিলে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে নেট (প্রকৃত) বিনিয়োগ আসে তিন হাজার ৭৪১ কোটি টাকা, যা গত বছরের এপ্রিলে ছিল তিন হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।
এর আগের অর্থবছর সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু অতিরিক্ত বিক্রি হওয়ায় ৪৬ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিল সরকার।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি মানে সরকারকে বেশি করে ঋণের সুদ গুনতে হয়। আগামী অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের সুদ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ২৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
এমইউএইচ/বিএ/এমএস