চলছে কালো স্বর্ণ বৈধ করার মেলা
অবৈধ স্বর্ণ কর দিয়ে বৈধ করতে দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে স্বর্ণ কর মেলা। ভরিতে মাত্র এক হাজার টাকা কর পরিশোধ করে মেলায় অপ্রদর্শিত স্বর্ণ বৈধ করতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।
রোববার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ ‘স্বর্ণ মেলা’র উদ্বোধন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এনবিআর সদস্য (আয়কর) কানন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার, সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালাসহ স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও রাজস্ব কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যৌথভাবে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ মেলা চলবে ২৫ জুন (মঙ্গলবার) পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
মেলায় ভরিপ্রতি ডায়মন্ড ৬ হাজার টাকা, স্বর্ণ এক হাজার টাকা ও রুপার জন্য ৫০ টাকা কর প্রদান করে অবৈধ সোনা, রুপা বৈধ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মেলায় সোনালী ও বেসিক ব্যাংকে বুথ রয়েছে। সেখানে কর পরিশোধ করলে সারচার্জ ফ্রি সেবা দেয়া হচ্ছে।
রোববার মেলা ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে কর অঞ্চল ভিত্তিতে বিভিন্ন স্টল ভাগ করা দেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা তাদের অপ্রদর্শিত স্বর্ণ বৈধ করতে মেলায় এসেছেন। কিভাবে কি করতে হবে বিস্তারিত প্রক্রিয়া বুঝে নিচ্ছেন কর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
এমনই একজন নিউ মার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আবু নাসের মো. আবদুল্লাহ। রোজা জুয়েলার্সের মালিক তিনি। জাগো নিউজকে বলেন, ‘অপ্রদর্শিত স্বর্ণ বৈধ করার মেলা দেশে এবারই প্রথম হচ্ছে। মেলার উদ্বোধন উপলক্ষে এসেছি। পাশাপাশি আমার প্রতিষ্ঠানে যে স্বর্ণ আছে তা কোন প্রক্রিয়ায় কর পরিশোধ করব তা জেনে নিচ্ছি। স্বর্ণের দাম নিয়ে একটি সমস্যা আছে। অর্থাৎ বৈধ করার সময় কোনো মূল্য দেখাবো। পূর্বের কেনা মূল্য না কি বর্তমান বাজার মূল্য? পূর্বের মূল্য দেখালে স্বর্ণ বাড়বে। আর বর্তমান মূল্য দেখালে টাকার পরিমাণ বাড়বে। তাতে করও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন নীতিমালা হয়েছে। অনেক কিছুর সমস্যা আছে। তবে এখন যেহেতু বৈধ করার সুযোগ এসেছে তাই কর দিয়ে বৈধ করব। আমি আজকে জানলাম আগামীকাল এসে কর দিয়ে স্বর্ণ ঘোষণা করব।’
মেলায় গাজীপুর কর অঞ্চলের স্টলে দায়িত্বে থাকা প্রধান সহকারী শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এর আগে কখনো স্বর্ণ মেলা হয়নি। তাই ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বিষয়ে বুঝতে আসছেন। কিভাবে কর পরিশোধ করে স্বর্ণ বৈধ করবে। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।’
মেলা উদ্বোধন কালে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পের মতো যারা স্বর্ণের কাঁচামাল রফতানির উদ্দেশে আমদানি করবে তাদের বন্ড সুবিধা দেয়া হবে। যারা বন্ড সুবিধা পাবেন তাদের আমদানি করা সব স্বর্ণ রফতানি করতে হবে। বন্ড সুবিধায় আনা স্বর্ণ খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না।
সাধারণ মানুষ বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন। এর চেয়ে বেশি আনলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঁচ লাখ টাকা নিতে বলেছি। আর এ লাইসেন্স তিন বছর পরপর নবায়নের জন্য এক লাখ টাকার নেয়ার কথা এনবিআর থেকে বলা হয়েছে। এটিই চূড়ান্ত হবে।
এনবিআর সদস্য (আয়কর) কানন কুমার রায় বলেন, ‘এসআরও ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের এসআরও হবে কিনা- তা আমি জানি না। তাই এ সময় অপ্রদর্শিত স্বর্ণ ঘোষণা দিয়ে বৈধ করবেন। আর এ সুযোগ নিয়ে যারা স্বর্ণ বৈধ করবেন না তাদের জন্য ভালো কোনো বার্তা আমরা দিতে পারব না।’
এসআই/এমআরএম/পিআর