ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

তামাকপণ্যের দাম ও কর বৃদ্ধির সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৩৮ পিএম, ২২ জুন ২০১৯

দেশে তামাকের ব্যবহারনীতি থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। যারা এটি বাস্তবায়ন করবে তাদের কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় তামাক ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে না। আয় বাড়ার অনুপাত অনুযায়ী তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জমান।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে তামাকবিরোধী নয়টি সংগঠন আয়োজিত তামাক কর বাজেট প্রতিক্রিয়া, ২০১৯-২০ অনুষ্ঠানে তিনি এমন কথা বলেন।

কাজী খলিকুজ্জমান বলেন, শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নয়, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদেরও সমস্যা রয়েছে। এ কারণে নীতিমালা এক, আইন আরেক আর কাজ হয় ভিন্নভাবে। যারা এসব করছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা থাকছে না। এজন্য সবার জবাবদিহিতা তৈরি করতে হবে।

খলিকুজ্জমান বলেন, তামাক আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এর ব্যবহার কমাতে বেশি বেশি কর বাড়িয়ে তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর কথা থাকলেও যে পরিমাণে মানুষের আয় বাড়ছে, সে পরিমাণে দাম বাড়ানো হচ্ছে না। বছরে এ খাত থেকে ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হচ্ছে। সেটি দেখা হচ্ছে, কিন্তু এর জন্য কী ক্ষতি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হয় না।

একটি যৌক্তিক কর নীতিমালা করার দাবি জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কর নীতিমালা থাকতে হবে। সেটি থাকলে ধরা যাবে কোনটি বাস্তবায়ন হচ্ছে আর কোনটি হচ্ছে না। প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক রফতানি কর তুলে দেয়ায় নতুন হুমকির মধ্যে পড়তে হবে। চাষিদের মধ্যে তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। এটি নিরুৎসাহী করতে হবে। নতুবা এশিয়ার মধ্যে আমাদের প্রবৃদ্ধি বেশি হলেও তা ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের ওপর পর্যাপ্ত করারোপ না করায় এর ব্যবহার বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া লিখিত বক্ত্যব্য তুলে ধরেন প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা’র) নাদিরা কিরণ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তামাকজাত পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ, নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তামাকের ছোবল থেকে সুরক্ষার স্বার্থে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সকল তামাকজাত পণ্যের ওপর মূল্য ও করারোপ সংক্রান্ত কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা এবং সুপারিশ করা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।

বলা হয়, বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি ৭৮ হাজার লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী ২০ দশমিক ৬ শতাংশ (২ কোটি ২০ লাখ) এবং ধূমপায়ী ১৮ শতাংশ (১ কোটি ৯২ লাখ)। প্রস্তাবিত বাজেট তামাকবিরোধীদের হতাশ করেছে। বিশেষ করে বিড়ি এবং নিম্নস্তরে সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রাখায় এগুলোর প্রকৃতমূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে।

অন্যদিকে, টানা তৃতীয় বছরের মতো সিগারেটের করহার (সম্পূরক শুল্ক) প্রায় অপরির্তিত রাখায় তামাক কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে লাভবান হবে ও সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য মাত্র ২ টাকা বৃদ্ধি করে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং করহার অপরিবর্তিত অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। ফলে এই স্তরে প্রতি শলাকা সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পাবে মাত্র ২০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। মধ্যমস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে ৬৪ টাকা এবং উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে ১৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ টাকা ও ১২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েয়ে। অথচ মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

এর প্রতিকারে তারা ছয়টি প্রস্তাব ও ১০টি সুপারিশ তুলে ধরেন। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, নিম্নস্তরের সিগারেটের ওপর বিদ্যমান ৫৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে ৬০ শতাংশ এবং মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়ার স্তরে বিদ্যমান ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে ৭০ শতাংশ নির্ধারণের ফলে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্টি করারোপ, বিড়ির ফিল্টার-ননফিল্টার মূল্যবিভাজন তুলে দিয়ে ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ এবং ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট করারোপ, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং ৪৫ শতাংশ কর ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট করারোপ, অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের ওপর বিদ্যমান ১০ শতাংশ রফতানি শুল্ক বহাল এবং প্রক্রিয়াজাত তামাকপ্রণ্যর ওপর পুনরায় ২৫ শতাংশ রফতানি শুল্ক আরোপ উল্লেখ্যযোগ্য।

এছাড়াও সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা চারটি থেকে কমিয়ে আনতে হবে, সকল তামাকপণ্যের ওপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, সকল প্রকার ই-সিগারেট এবং হিটেড তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বৃদ্ধি করাসহ ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জাতীয় রাজ্যস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকারের উচ্চপদের কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে যুক্ত রয়েছেন। এ কারণে সকল কিছু তাদের পক্ষে হয়ে থাকে। তামাকপণ্যের ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে বিক্রিও করা হচ্ছে। এ শেয়ার তুলে দেয়া প্রয়োজন।

জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিকের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালেক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও এনজিওর কর্তাব্যক্তিবর্গ।

এমএইচএম/বিএ/এমএস

আরও পড়ুন