বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ায় ধূমপায়ীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
পুরোনো এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ১ কোটি লাখ ৮০ লাখ মানুষ ধূমপায়ী। তবে সেই সংখ্যা এখন ২ কোটি ছাড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই গবেষণা আরও বলছে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষই ধূমপায়ী। ধূমপায়ী পুরুষদের ২৮ শতাংশেরও বেশি সিগারেট খায় এবং কমপক্ষে ২১ শতাংশ পুরুষ বিড়ি খায়।
অন্য এক পরিসংখ্যান বলছে, ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের কমপক্ষে দুই শতাংশের বেশি ধূমপান করে। জীবনের জন্য ক্ষতিকর হলেও ভয়াবহভাবেই বাড়ছে বাংলাদেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা।
তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন, বাজারজাতকরণসহ বিক্রির বিরুদ্ধে সোচ্চার বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। তামাকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে আসছে সরকারও। এমনকি তামাকবিরোধী স্লোগান থাকে বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেটেও। ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতেই প্রতিবার রাষ্ট্রীয় বাজেটে কর বাড়ানো হয় তামাকজাত পণ্যে।
করারোপ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এবারও বাড়ছে বিড়ি-সিগারেটের দাম এবং তা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অধিকমাত্রায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়তে পারে, তা আগেই ঘোষণা দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আজ পেশকৃত বাজেটেও বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে ধূমপায়ীদের।
বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ানো নিয়ে ধূমপায়ী-অধূমপায়ী উভয়ই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ বলছেন, ধূমপানের মাত্রা ঠেকানোর জন্য কর বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। আবার কেউ কেউ বলছেন, দাম বাড়িয়ে আসলে ধূমপান ঠেকানো যায় না। তারা মনে করেন, সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতেই এমন কৌশল নিয়ে আসছে।
সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মাহবুব আলম। স্কুলজীবন থেকে ধূমপানে আসক্ত এই তরুণ। বলেন, ‘বহুবার চেষ্টা করেছি সিগারেট ছেড়ে দেয়ার। পারিনি। এবারে দাম অতিরিক্ত করায় হয়তো সেই সুযোগটি এসে গেল। ১৫ বা ২০ টাকা দিয়ে একটি শলাকা কেনার ইচ্ছা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে আসছে। আমি অন্তত দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদই জানাচ্ছি।‘
শুধু দাম বাড়িয়ে নয়, এক্ষেত্রে সরকারের নীতির আরও পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করেন এই তরুণ।
মুকুল নামের আরেক ধূমপায়ী বলেন, দাম বাড়িয়ে ধূমপান বন্ধ করা গেলে অনেক আগেই তা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, প্রতি বছর সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়, আর প্রতিব ছরই ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজস্ব বাড়ানোই মূলত সরকারের উদ্দেশ্য।’
ধূমপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর বলে স্বীকার করলেন এই ধূমপায়ী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু ছাড়তে তো পারছি না। আর ছাড়তে পারি না বলেই অন্য খাতের ব্যয় কমিয়ে সিগারেটে বাড়াতে হবে। আর সেটি মূলত, সিগারেট কোম্পানি এবং সরকারের কোষাগারে চলে যাবে।’
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ি ও সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ধূমপানবিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান, তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকায় এর ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এ দাম বাড়ানো হচ্ছে।
আগামী বছর নিম্নতম স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ টাকা। সেখানে সম্পূরক শুল্ক ধরা হয়েছে ৫৫ শতাংশ। মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের মূল্য হবে ৬৩ টকা এবং সম্পূরক শুল্ক হবে ৬৫ শতাংশ। উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের মূল্য হবে ৯৩ টাকা ও ১২৩ টাকা। এখানে সম্পূরক শুল্ক হবে ৬৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী নিম্নতম স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের দাম ৩৫ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ। মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের মূল্য ৪৮ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ। উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের দাম ৭৫ ও ১০৫ টাকা। এখানে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ।
ফিল্টারবিহীন ও ফিল্টারযুক্ত বিড়িতে সম্পূরক শুল্ক হার আগের মতোই যথাক্রমে ৩৫ ও ৪০ শতাংশ থাকবে। বিড়ির ট্যারিফ মূল্য উঠিয়ে দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন হয়। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। বরাবরের মতো বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। যদিও গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে অনেক বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।
শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভবপর না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন।
বেলা ৪টা ৪১ মিনিটে ‘প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হলো’ মর্মে ঘোষণা দেন স্পিকার।
প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর মূল বাজেটের আকার দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় করতে না পারা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে ৮০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বেশি।
এএসএস/এসআর/এমকেএইচ