ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

বাজার নয়, পদ ঠেকাতে ব্যস্ত তারা!

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৫:২৫ পিএম, ০৩ জুন ২০১৯

অব্যাহত দরপতনে একটু একটু করে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। পতন ঠেকাতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। উল্টো বছরের পর বছর ধরে অতিরিক্ত সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্টের (ব্যবস্থাপনা পর্ষদ) শীর্ষ কর্তারা।

অভিযোগ রয়েছে, ডিএসই’র শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা মাঝে মধ্যে দু-একটি কঠোর পদক্ষেপের উদ্যোগ নিলেও ম্যানেজমেন্টের কারণে তা সফলতার মুখ দেখছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং পুঁজিবাজারের প্রভাবশালীরা কিসে সন্তুষ্ট থাকবেন- সে কাজ করতে ব্যস্ত ডিএসই’র ম্যানেজমেন্ট।

শোনা যাচ্ছে, ডিএসই’র এমডি মাজেদুর রহমান তার নিয়োগ নবায়নের জন্য নানা চেষ্টা চালাচ্ছেন। আগামী ১২ জুন ডিএসই’র এমডি হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারী এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিম উচ্চ বেতনে চুক্তিভিত্তিক ডিএসইতে যোগ দেন। ২০১৬ সালে ওই পদ দুটি স্থায়ী করে নেয়া হয়। তবে তাদের বেতন-কাঠামো নতুন করে নির্ধারণ করা হয়নি। বরং নতুন করে তারা গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, আর্ন লিভ, ওয়ার্কার প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড সুবিধা পাচ্ছেন।

সে সময় সিএফও ও সিটিও’র পাশাপাশি ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাজেদুর রহমানের বেতনও বাড়িয়ে নেয়া হয়। এমডি নিজের বেতন পাঁচ লাখ টাকা থেকে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ছয় লাখ টাকা করে নেন। সিএফও আব্দুল মতিন পাটোয়ারী ও সিটিও জিয়াউল করিমের বেতন ২১ শতাংশ বাড়িয়ে চার লাখ থেকে করা হয় চার লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

সিএফও ও সিটিও পদ দুটি স্থায়ী করে গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, আর্ন লিভ, ওয়ার্কার প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড সুবিধা দেয়ার বিষয়ে ডিএসই’র পর্ষদ সভার অনুমোদন নেয়া হয় ২০১৬ সালের নভেম্বরে। বাড়তি সুবিধা দিয়ে ডিএসই’র পর্ষদ সভায় সে সময় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নতুন বেতন স্কেল করার পর সিএফও ও সিটিও’র বেতন পুনঃনির্ধারণ হবে। তবে এরপর আড়াই বছর কেটে গেলেও ডিএসই’র বেতন স্কেল নতুন করে নির্ধারণ হয়নি।

তবে গত জানুয়ারিতে ডিএসই’র চাকরির বিধিমালা তৈরির লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ নেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এ লক্ষ্যে বিএসইসি’র ডেপুটি ডিরেক্টর আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি গত জানুয়ারিতে ডিএসই’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন।

বৈঠকে ডিএসই’র কর্মকর্তারা প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার পদ দুটি চুক্তিভিত্তিক করার দাবি জানান। সেই সঙ্গে দ্রুত বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়ারও দাবি জানান। কিন্তু এরপর মাস কেটে গেলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বিএসইসি। বরং ডিএসই’র কর্মকর্তাদের বিতর্কিত আরও একটি পদোন্নতি দেয়া হয়।

এদিকে এসিআই লিমিটেড ও কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্তের উদ্যোগ নেয় ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ। বছরের পর বছর ধরে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির লোকসান টানায় এসিআই লিমিটেডের আর্থিক আবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যে কারণে ডিএসই পর্ষদের একটি অংশ এসিআই’র সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘স্বপ্ন’ বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান। আর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা তুলতে অস্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন দেয়ায় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ-কে তালিকাভুক্ত না করার দাবি ওঠে।

ডিএসই’র শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের চাপাচাপিতে এসিআই’র বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং কপারটেক’র আর্থিক হিসাব খতিয়ে দেখতে ডিএসই’র সিআরও-কে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ সভায় কোম্পানি দুটির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসিতে সুপারিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই পর্ষদ সভায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে এক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক প্রথমে ডিএসই’র সিএফও-কে বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানানোর আহ্বান করেন। তবে কোনো কথা না বলে সিএফও আবদুল মতিন পাটুয়ারী স্থানত্যাগ করেন। এরপর ওই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক সিআরও জিয়াউল হক-কে কথা বলার আহ্বান জানান। এ কর্মকর্তাও সিএফও’র পথ অনুসরণ করেন। এ সময় ডিএসই’র ওই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হতাশা প্রকাশ করেন।

কিছুক্ষণ পর দেখা মেলে ডিএসই’র এমডি মাজেদুর রহমানের। এ সময় ওই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ডিএসই’র এমডিকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর আহ্বান জানান। তবে মাজেদুর রহমান সেখানে কোনো কথা না বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের তার রুমে ডেকে নিয়ে যান। এরপর অফ দ্য রেকর্ড বিএসইসি সম্পর্কে বেশকিছু কথা বলেন তিনি। প্রতিটি কথাতেই বিএসইসি’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের খেপানো যাবে না- এমন ইঙ্গিত দেন ডিএসই’র এমডি।

গত সোমবার বিএসইসি চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনকে এক অভিনন্দন বার্তা দিয়ে তার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ডিএসই’র এমডি মাজেদুর রহমান। অভিনন্দন বার্তায় বলায় হয়, খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন অত্যন্ত ধৈর্য-সহকারে প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে সুদীর্ঘ আট বছর পুঁজিবাজার উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন৷

এ বিষয়ে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, এমডি হিসেবে মাজেদুর রহমানের আর বেশিদিন সময় নেই। এখন তিনি তার নিয়োগের সময় বাড়াতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যে কারণে কীভাবে বিএসইসি’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট রাখা যায় তিনি সে চেষ্টাই করছেন।

ডিএসই’র এ সদস্য আরও বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য ডিএসই’র ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ কোনো সুপারিশ আসেনি। মূলত ডিএসই’র ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন তাদের বাজার সম্পর্কে খুব একটা ধারণা আছে বলে মনে হয় না। বোনাস শেয়ারের ওপর বর্তমানে লকিং (বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা) প্রথা আছে, এটি ডিএসই’র এমডি জানেন না। যে কারণে বোনাস শেয়ারের ওপর দুই বছর লকিং ব্যবস্থার প্রচলন থাকলেও, বিএসইসি’র কাছে ডিএসই থেকে বোনাস শেয়ারের ওপর এক বছর লকিং প্রথা চালুর দাবি জানানো হয়েছে। ডিএসই’র এমন প্রস্তাব হাস্যকর।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান বিএসইসি’র চেয়ারম্যানের অধীনে যেসব কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ইস্যু-মূল্যের নিচে চলে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা এ কারণে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন। সেখানে ডিএসই’র পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত নয়। ডিএসই’র এমডি এটি কেন করেছেন তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। এটা একধরনের তেলবাজি।

সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এমএএস/এমএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন