দেশী দশ-এ সুতি থ্রি-পিসে মজছে নারী
এক সপ্তাহ পরেই মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতার। এক মাস সিয়াম সাধনার পর নতুন পোশাকে দিনটি উদযাপন করতে চান সবাই। এ কারণে পছন্দের পোশাক খুঁজতে মার্কেটে মার্কেটে ছুটছেন ক্রেতারা। এ দোকান সে দোকান ঘোরাঘুরি করে কিনে নিচ্ছেন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পছন্দের পোশাকটি।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এবং উৎসবের আমেজ আরও বাড়িয়ে দিতে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের মতো অভিজাত শপিং সেন্টার বসুন্ধরা সিটিও সেজেছে নতুন সাজে।
এ মার্কেটে রয়েছে সাদাকালো, নগরদোলা, বাংলার মেলা, কে-ক্র্যাফট, নিপুণ, বিবিআনা, অঞ্জন’স, দেশাল, রঙ এবং সৃষ্টি। এই দশটি দেশীয় ফ্যাশন হাউজের সম্মিলিত ব্র্যান্ড 'দেশী দশ’। এক ছাদের নিচে এ প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় ঐতিহ্য-আধুনিকতা আর সংস্কৃতিকে লালন করে পসরা সাজিয়েছে পোশাকের।
প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের জন্য রয়েছে- শাড়ি, থ্রি-পিস, সিঙ্গেল স্যালোয়ার-কামিজ, টপস, কুর্তি, ফতুয়া, প্লাজুর পাশাপাশি হাত, কান, গলা, নাকের বাহারি জুয়েলারি সামগ্রী। নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের পোশাকও রয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে রয়েছে- পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট। বাদ নেই শিশুদের সংগ্রহও। শিশুদের জন্য আছে টপস, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, শাড়ি, থ্রি-পিসসহ বাহারি সব পোশাক। এক কথায় পরিবারের সদস্যদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এক জায়গাতেই।
ঈদ উপলক্ষে দেশী দশের ফ্যাশন হাউজগুলো নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ- সবার জন্য পোশাকের পসরা সাজালেও সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে নারীদের সুতির থ্রি-পিস। হাল্কা ডিজাইনের সুতির থ্রি-পিসে নারীদের সবচেয়ে বেশি টানছে বলে ১০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান।
বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৭ এ ‘দেশী দশ’ ঘুরে দেখা গেছে, একসঙ্গে ১০টি ফ্যাশন হাউজ রঙবেরঙের কাপড় সাজিয়ে রেখেছে। প্রত্যেকটির হাউজের আছে নিজস্ব সংগ্রহ এবং আয়োজনের ভিন্নতা। সবাই নিজেদের নতুন নতুন কালেকশন (পোশাক) ক্রেতাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছেন। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই আধুনিকতার সমন্বয়ে দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া নজর কাড়ে।
একটি মাত্র গেট দিয়ে প্রবেশ করে ক্রেতারা একটি ফ্যাশন হাউজ থেকে বের হয়ে আরেকটিতে যাচ্ছেন। নেড়েচেড়ে দেখছেন কাপড় আর বিভিন্ন নকশা। পছন্দ আর বাজেট মিলে গেলেই কিনে নিচ্ছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, দেশীয় ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এসব প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছে। দাম রাখা হচ্ছে ক্রেতাদের হাতের নাগালে।
সাদা কালো
দেশী দশে প্রবেশ করলেই প্রথমে দেখা মিলে ‘সাদা কালো’। সাদা ও কালো রঙের বাহারি সব পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। এবারের ঈদ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির নতুন স্লোগান- আর্ট ওয়ার্ক (চিত্রকলায় সাদা কালো)।
কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় ইনচার্জ পিংকি’র সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে মেয়েদের ১৩৮০ থেকে ২২০০০ টাকা দামের শাড়ি আছে। থ্রি-পিস আছে ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা দামের। এছাড়া ১২৫০ থেকে ২৫০০ টাকার সিঙ্গেল কামিজ, ১২২০ থেকে ২৫০০ টাকার টপস, ২১৮০ থেকে ৪০০০ টাকা দামের থ্রি-পিসের কাপড় আছে। ছেলেদের জন্য আছে ৯৮০ থেকে ৪০০০ টাকা দামের পাঞ্জাবি এবং ৭৫০ থেকে ১২৫০ টাকা দামের শার্ট। বাচ্চাদের ফ্রক, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১৮০০ টাকায়।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এবার সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের সুতির থ্রি-পিস। গরমের কারণেই হয়তো সবাই সুতির থ্রি-পিসের দিকে ঝুঁকছেন। বিক্রি পরিস্থিতি মোটামুটি। তবে গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবার বিক্রির পরিমাণ বেশ কম।
নগরদোলা
প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ নুসরাত জাহান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে ৭৯০-৬৪৯৯০ টাকা দামের শাড়ি, ২০৯০-৬০৯০ টাকার থ্রি-পিস, ৮৯০-৩০৯০ টাকার সিঙ্গেল কামিজ, ৪৫০-৮০০ টাকার ওড়না, ৩৯০-৮৯০ টাকার প্লাজু, ৩৯০-১২৯০ টাকার টপস, ৯৯০-৮৯৯০ টাকার পাঞ্জাবি, ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকার লুঙ্গি আছে।
তিনি বলেন, একসঙ্গে দেশীয় ১০টি প্রতিষ্ঠান পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসায় ক্রেতাদের জন্য পছন্দের পণ্যটি কেনা সহজ হচ্ছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে যার যেটি পছন্দ সে সেটি কিনে নিচ্ছে। এবার আমরা সব থেকে বেশি বিক্রি করেছি সুতির থ্রি-পিস। এর পাশাপাশি সিঙ্গেল সুতির কামিজের প্রতিও ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ আছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা কম।
বাংলার মেলা
নগরদোলা থেকে বের হলেই পাওয়া যাবে ‘বাংলার মেলা’। প্রতিষ্ঠানটিতে ছেলেদের জন্য রয়েছে ৬০০-১১৫০ টাকা দামের হাফ শার্ট, ৯৫০-৩৫০০ টাকার পাঞ্জাবি ও ৬০০-১২৫০ টাকা দামের শার্ট ফতুয়া। বাচ্চাদের জন্য আছে ৩৫০-৭৫০ টাকা দামের শার্ট ও ফতুয়া। নারীদের ৬০০-১২৫০০ টাকার শাড়ি, ২০৫০-৫৫৫০ টাকার থ্রি-পিস, ৮৫০-২০৫০ টাকার টপস।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে কাজ করা সুতির থ্রি-পিস সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে গর্জিয়াস কাজ করা থ্রি-পিসের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। সবাই হালকা কাজের থ্রি-পিসের দিকে ঝুঁকছেন। ঈদ উপলক্ষে এবার আমাদের বিক্রি বেশ ভালো।
কে-ক্রাফট
প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় ইনচার্জ রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, এবার আমাদের বিক্রি ভালো নয়। গত বছরের তুলনায় বিক্রি অনেক কম, যা বিক্রি হচ্ছে এর মধ্যে হালকা কাজ করা সুতির থ্রি-পিসই বেশি চলছে।
ঈদ সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, এবার আমরা মেয়েদের থ্রি-পিস নিয়ে এসেছি ২৭০০-৮৯০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া ১১০০-৩৫০০ টাকার কুর্তি এবং ১০০০-২০০০০ টাকার শাড়ি আছে। ছেলেদের জন্য আছে ১০৯০-৩৫০০ টাকা দামের পাঞ্জাবি, ৯০০-১৫০০ টাকার ফতুয়া, ৬৫০-২০০০ টাকার শার্ট এবং ৪৯০-৬২০ টাকার টি-শার্ট। বাচ্চাদের জন্য আছে ৩০০-৩৫০০ টাকা দামের টপস, থ্রি-পিস, টি-শার্ট, শাড়ি।
নিপুণ
প্রতিষ্ঠানটি নারীদের থ্রি-পিস বিক্রি করছে ২৮৫০-৬৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া আছে ২২৫০-১৮০০০ টাকা দামের শাড়ি। কুর্তি আছে ১২৯০-২৮৯০ টাকা দামের। ছেলেদের জন্য আছে ১১৯০-৩৮০০ টাকা দামের পাঞ্জাবি, ৭৫০-৯৯০ টাকার শার্ট এবং ৭৫০-১০৫০ টাকা দামের ফতুয়া। বাচ্চাদের জন্য আছে ৭৯০-১৭৯০ টাকার পাঞ্জাবি, ৪৫০-১২৯০ টাকার টপস এবং ১০৯০-২৯৫০ টাকার থ্রি-পিস।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মেজবাহ জাগো নিউজকে বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে আমরা সিম্পল কাজ করা সুতির থ্রি-পিস সব থেকে বেশি বিক্রি করেছি। এর পাশাপাশি ছেলেদের সুতির পাঞ্জাবিও ভালো বিক্রি হয়েছে। লিলেন পাঞ্জাবিও খারাপ চলছে না। তবে মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে সুতি থ্রি-পিসের একচেটিয়া দাপট রয়েছে। গরমের কারণেই হয় তো সবাই সুতির কাপড়ের দিকে ঝুঁকছে।
বিবিআনা
প্রতিষ্ঠানটি শাড়ি বিক্রি করছে ১৩০০-১৫০০০ টাকার মধ্যে। থ্রি-পিস আছে ২২০০-৬০০০ টাকা দামের। ওয়ান পিস আছে ১০০০-২০০০ টাকার মধ্যে। ছেলেদের পাঞ্জাবি আছে ৮০০-২০০০ টাকার মধ্যে। আর বাচ্চাদের পাঞ্জাবি আছে ৫০০-১২০০ টাকার মধ্যে।
প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ শিখা জাগো নিউজকে বলেন, এবার আমাদের বিক্রি গত বছরের তুলনায় বেশ ভালো। এখনও পর্যন্ত আমরা সব থেকে বেশি বিক্রি করেছি শাড়ি। আমাদের শাড়ির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। বিশেষ করে ২৬০০-৩০০০ টাকা দামের জামদানি শাড়ি সব থেকে বেশি চলছে।
অঞ্জন’স
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার গৌতম জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমাদের ঈদের বিক্রি বেশ ভালো। ছেলেদের সুতির পাঞ্জাবি বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের সুতির থ্রি-পিস। এবার হালকা কাজ করা সুতির থ্রি-পিসই মেয়েরা বেশি পছন্দ করছেন।
ঈদ সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এবার ঈদ উপলক্ষে ২০০০-১০০০০ টাকা দামের থ্রি-পিস নিয়ে এসেছি। এর পাশাপাশি ১০০০-৩০০০০ টাকা দামের শাড়ি, ১৩০০-২০০০ টাকা দামের সিঙ্গেল কামিজ, ১০৯৫-৫৫০০ টাকার পাঞ্জাবি এবং ৭৫০-২০০০ টাকা দামের শার্ট। এছাড়া ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে নিয়ে এসেছি জার্সি। প্রতিটি জার্সি বিক্রি করা হচ্ছে ১১০০ টাকায়।
দেশাল
ঈদ সংগ্রহের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রোজারিও বলেন, ক্রেতা ধরে রাখতে এবার আমরা পোশাকের দাম কমিয়েছি। মেয়েদের জন্য ব্লকের কিছু শাড়ি বিক্রি করছি ১০০০ টাকায়। ছেলেদের ফতুয়া আছে ৩০০-৬০০ টাকা দামের। এছাড়া পাঞ্জাবি আছে ৭০০-১২০০ টাকার মধ্যে। মেয়েদের থ্রি-পিস আছে ১৬০০-৩৫০০ টাকা এবং শাড়ি ৮০০-২৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া কামিন ৮৫০-২৫০০ টাকা, টপস ৩০০-১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, দাম কমানোর পরও এবার আমাদের বিক্রি আগের বছরের তুলনায় বেশ কম। গত বছর যে বিক্রি করেছি, এবার তার থেকে ৩০ শতাংশ বিক্রি কম হয়েছে। এর মধ্যেই যা বিক্রি হয়েছে সেখানে সুতি থ্রি-পিসই বেশি। পাশাপাশি ১২৫০ টাকা দামের ঢোল সালোয়ার, ৯৬০ টাকা দামের টার্কি সালোয়ার এবং ৮৫০ টাকা দামের প্লাজু ভালো বিক্রি হচ্ছে।
রঙ
প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী তারেক জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে সুতির পাশাপাশি মসলিন ও সিল্কের ওপর হাতের কাজ করা শাড়ির কালেকশন আছে। এসব শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-২৫০০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া ২২০০-৫০০০ টাকার থ্রি-পিস, ৯৫০-৫০০০ টাকার কামিজ, ৯০০-৫০০০ টাকার পাঞ্জাবি, ৫৫০-১৫০০ টাকার শার্ট, ৩৬০-৯০০ টাকার টি-শার্ট বিক্রি করছি।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের বিক্রি পরিস্থিতি এবার বেশ ভালো। তবে ছেলেদের থেকে মেয়েদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে সুতির থ্রি-পিস বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
সৃষ্টি
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার হারুনার রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিক্রি ভালোও না আবার খারাপও না। গত বছরের থেকে অল্প বেশি বিক্রি বেড়েছে। এবার আমাদের ১৫৫০, ১৮৫০ ও ১৯৫০ টাকা দামের টু-পিস সব থেকে ভালো বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশ আমরা ৭৫০-৩০০০ টাকার পাঞ্জাবি, ৪৪০-৬৯০ টাকার টি-শার্ট, ৭৭০-৮৮০ টাকার শার্ট, ১৮৫০-২৪০০ টাকার থ্রি-পিস, ৯৫০-১০০০০ টাকার শাড়ি, ১২৫০-১৫৫০ টাকার কামিজ, ৬৫০-১০৮০ টাকার ফতুয়া বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মানুষের ভারতের পোশাকের প্রতি একধরনের আকর্ষণ রয়েছে। এর মূল কারণ হলো ভারতের পোশাকের মধ্যে ভেরিয়েশন আছে। কিন্তু আমাদের পোশাকের ডিজাইনের মধ্যে খুব বেশি ভেরিয়েশন নেই। মালিকদের এদিকে নজর দেয়া উচিত। ভালো ডিজাইনার এনে পোশাকে ভেরিয়েশন আনলে দেশি পোশাকের প্রতি মানুষের চাহিদা অনেক বাড়বে।
এমএএস/এমএসএইচ/এমএস