ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ভর্তুকিতে বরাদ্দ পদ্মা সেতুর দেড়গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:২৪ এএম, ২৭ মে ২০১৯

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। এসব খাতে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ বরাদ্দ ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেড়ে হচ্ছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয়ের দেড়গুণ।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সে অর্থে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ খাতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতুর ব্যয়ের দেড়গুণ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, প্রকৃত দামের চেয়ে কম দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিক্রি করতে হবে বলে নতুন বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। তাদের মতে, মোট ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়ছে মূলত এলএনজির কারণেই। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ খাতে বাজেট বরাদ্দ গত পাঁচ বছর খুব বেশি বাড়েনি বা কমেনি। এ সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় একপ্রকার স্বস্তিতে ছিলেন অর্থমন্ত্রীও। বাজেট প্রণয়নের সময় ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে আনার প্রবণতা দেখা গেছে।

যেমন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমিয়ে করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বরাদ্দ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছর থেকে ভর্তুকিতে এলএনজি যুক্ত হওয়ায় এ খাতে বরাদ্দ বেড়ে গেছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

ভর্তুকি কম দিতে হলে সরকারের জন্য ভালো। কারণ, এ টাকা সরাসরি জনগণের দেয়া করের। ভর্তুকি না দিতে হলে এ টাকা সরকার অন্য কাজে ব্যয় করতে পারতো। এতদিন ভর্তুকি দেয়া হচ্ছিল প্রধানত বিদ্যুৎ, কৃষি, রফতানি, খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ইত্যাদি খাতে। এবার নতুন করে দেয়া হচ্ছে এলএনজিতে। কারণ, সরকার হিসাব করে দেখেছে, যে দামে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, সেই দামে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে বিক্রি করলে তাদের পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। তাই গ্যাস ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার এখানে ভর্তুকি দিতে যাচ্ছে- জানায় অর্থ বিভাগ।

আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হবে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে নয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে ভর্তুকি রয়েছে নয় হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে গ্যাস খাতের এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি, যার পরিমাণ আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

খাদ্যে ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হচ্ছে চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা। খাদ্যেও চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১০৪ কোটি টাক বরাদ্দ কমছে। এছাড়া অন্যান্য খাতের জন্য নয় হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনার টাকার অংকে কোনো হেরফের হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের মতো আগামীতেও ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। কৃষি খাতের জন্য নয় হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। রফতানিতে নগদ প্রণোদনাও রাখা হচ্ছে চার হাজার কোটি টাকা। পাটের জন্য রাখা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর খেলাপি ঋণের ভারে নুয়ে পড়া ব্যাংক খাত বাঁচাতে আবারও দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ অর্থ মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যয় করা হবে।

ভর্তুকি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকেও একধরনের সমালোচনা রয়েছে। সেটি হচ্ছে, অর্থনীতিতে ভর্তুকি বেশি দিতে হলে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ে। অর্থ বিভাগের শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ভর্তুকির পক্ষেও যুক্তি রয়েছে। যেমন- ভর্তুকি না দিলে কৃষিপণ্য ও বিদ্যুতের দাম বাড়বে। আর প্রতিযোগী দেশগুলো রফতানিতে প্রণোদনা দেয়, বাংলাদেশ না দিলে রফতানি কমে যাবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে যে কম দামে চাল বিক্রি করে সরকার, সে কারণেও ভর্তুকি রাখতে হয়।

এমইউএইচ/এমএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন