জামদানির প্রতি নারীদের আকর্ষণ কমেছে
একসময় বাঙালি নারীর পোশাকে একচেটিয়া দাপট ছিল শাড়ির। বাহারি শাড়ির মধ্যে জামদানির প্রতি নারীদের ছিল বিশেষ টান। সময়ের বিবর্তনে নারীর পোশাকে শাড়ির দাপট কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে জামদানির প্রতি বিশেষ টানও।
আধুনিক প্রজন্মের নারীরা যেন শাড়ি পরতেই ভুলে গেছে। শাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে থ্রি-পিস, টু-পিস, মেক্সি, টপস, লেহাঙ্গাসহ বাহারি বিভিন্ন ভারতীয় পোশাক। এমনটাই জানিয়েছেন রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বাহারি জামদানি শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসে থাকা ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এবং শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে ১০ দিনব্যাপী ‘জামদানি পণ্যের প্রদর্শনী’ উপলক্ষে জমদানি শাড়ির এই পসরা সাজিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ২৫ মে পর্যন্ত।
প্রদর্শনীতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে জামদানি শাড়ি এনেছেন মো. জাহাঙ্গীর। ১৯৯৮ সাল থেকে জামদানি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত এ ব্যবসায়ী প্রায় ১০ বছর ধরে বিভিন্ন মেলায় অংশ নিচ্ছেন। শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনীতে তিনি নিয়ে এসেছেন ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা দামের জামদানি শাড়ি।
প্রায় দুই যুগ ধরে জামদানি শাড়ি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত মো. জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, পৈত্রিক সূত্রে এ পেশায় জড়িয়েছি। আমার বাপ-দাদাও জামদানি শাড়ি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, আগে ঢাকায় জামদানি শাড়ি আনলে অনেক মূল্য পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আর সেই মূল্য পাওয়া যায় না। জামদানির প্রতি মানুষের এখন আর সেই টান নেই।
জামদানির প্রতি টান কমার কারণ কী? এমন প্রশ্ন করলে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এখন অনলাইনে পোশাক বিক্রি হয়। মানুষের রুচিতেও পরিবর্তন এসেছে। আগে সব নারীই শাড়ি পরত। এখন শাড়ি খুব কম নারীই পরে। থ্রি-পিস, টু-পিস, মেক্সি, টপস, লেহাঙ্গা এসব পোশাকই চলে বেশি।’
রূপগঞ্জ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া আরেক এক ব্যবসায়ী মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমরা ৩ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা দামের জামদানি শাড়ি নিয়ে এসেছি। আশা করছি, এখানে বিক্রি ভালো হবে। আগেও বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছি, সেখানেও বিক্রি ভালো হয়েছে। তবে একটা কথা সত্য যে, ১০-১২ বছর আগে যেভাবে শাড়ি বিক্রি হতো, এখন সেভাবে হয় না। আগের তুলনায় এখন শাড়ি বিক্রির পরিমাণ অনেক কম। যে কারণে রূপগঞ্জের অনেক ব্যবসায়ী জামদানি শাড়ি বানানো বন্ধ করে দিয়েছেন।’
নারায়গঞ্জের সোনারগাঁওয়ের আরেক ব্যবসায়ী মো. আবু সালাম। তিনি বলেন, ‘আমর বয়স যখন ৮ বছর, তখন থেকে জামদানি শাড়ির সঙ্গে জড়িত। ১৯৮৮ সাল থেকে জামদানি শাড়ি তৈরি ও বিক্রি করছি। আমার বাপ-দাদাও এ কাজ করেছেন। আগের জামদানির প্রতি সবারই এক ধরনের বিশেষ টান ছিল। জামদানি শাড়ি পেলে খুশি হতো না এমন নারী ছিল না। কিন্তু এখন অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা জামদানি শাড়ি খুব একটা কেনেন না।’
এর কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বললেন, ‘ভারতীয় শাড়ি এসে জামদানির অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে। ভারতীয়রা জামদানির মতো এক ধরনের শাড়ি বানায়, যার দাম তুলনামূলক কম। কিন্তু সেগুলো আসল জামদানি না। ভারতীয় শাড়ির সঙ্গে আমাদের শাড়ির মানের আকাশ-পাতাল তফাৎ। কিন্তু সবাই তো বোঝে না। যারা বোঝেন তারা ভারতের শাড়ি কেনেন না।’
সোনারগাঁওয়ের নিজ বাড়িতে জামদানি শাড়ি তৈরি ও বিক্রির কাজ করেন আবু সালাম। তার আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এর আগে কখনো কোনো প্রদর্শনী বা মেলাতে অংশ নেননি। এবারই প্রথম মেলায় অংশ নিচ্ছেন। প্রদর্শনীতে তিনি যে শাড়ি এনেছেন তার দাম ৩ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। জামদানির পাশাপাশি তিনি ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবির পিস নিয়েও বসেছেন। এগুলোর দাম ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা।
এমএএস/এসআর/এমকেএইচ