বিশেষ সুবিধার সংবাদে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান
আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার (২ মে) দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরু থেকেই দুই বছরের মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে মূল্যসূচক বড় উত্থানের আভাস দিতে থাকে এবং লেনদেন শেষ হয় বড় উত্থানের মধ্য দিয়ে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ঘোষণা দেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেয়ারবাজারে আমরা সব ধরনের সুযোগ দিচ্ছি। এখানে আগে অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমরা স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছি। এ নিয়ে খুব বেশি শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, যা যা নিয়ন্ত্রণ করার সে পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। তবে কেউ যদি গেম খেলতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি ও নেব, তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার রাতে এক অনুষ্ঠানে জানান, আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এ সময় তিনি শেয়ার বিক্রি না করার জন্য বিনিয়োগকারীদের নিষেধও করেন।
শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা আসে। এই ঘোষণার ফলে দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে লেনদেনে অংশ নেয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়তে থাকে।
ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে ওঠে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২৪ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচকে এই উত্থানের দিনে ডিএসইতে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৯টির এবং দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির।
মূল্যসূচক ও সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দর বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। টাকার অঙ্কে দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৭৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪১৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৬০ কোটি ১২ লাখ টাকা।
লেনদেনের এই উত্থানের দিনে বাজারটিতে টাকার পরিমাণে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে ফরচুন সুজ এবং ১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা লেনদেনে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে মুন্নু সিরামিক।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণফোন, ন্যাশনাল পলিমার, অ্যাকটিভ ফাইন, জিনেক্স ইনসোসিস, বিডিকম, এস্কয়ার নিট কম্পোজিট এবং ন্যাশনাল টিউবস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স ১৫৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৮৩ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকার। লেনদেন অংশ নেয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯৪টির, কমেছে ৩২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির।
এমএএস/এমবিআর/এমকেএইচ