আসছে বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ৩ লাখ ৭২ হাজার কোটি
>> বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা
>> বাজেট উপস্থাপন ১৩ জুন
আসছে বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। এ বাজেটে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুই দিককে সমান গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নির্বাচনী ইশতেহার আর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আয়-ব্যয় তথা প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টনে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটের আকার কিছুটা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন দেয়ার আগে এর আকারেও পরিবর্তন আসতে পারে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ইতিহাস সৃষ্টিকারী। যার পরিমাণ তিন লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থ বছরে ছিল তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। আয়-ব্যয়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতিও হবে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড়। যার পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি।
চলতি অর্থবছরের বাজেট চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তার ওপর নির্ভর না করে ধীরে ধীরে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নের কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই আগামী বাজেটে আয়কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হচ্ছে।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো বাজেট দিতে যাওয়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক। বৈঠকে মন্ত্রী প্রথমেই চলতি অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে রাজস্ব খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। কারণ, গত সাত মাসে এনবিআরের গ্রোথ রেট ৭ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি যোগ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। যা বাজেটের আয়ের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। এতে ঘাটতির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে। এ সময় তিনি এনবিআরের কর্তাব্যক্তিদের কাছে ইসিআর মেশিন কেনার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান। এ ব্যাপারে এনবিআরকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের কথা বলেন তিনি।
এরপর শুরু হয় আগামী অর্থবছরের বাজেট আলোচনা। আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রাক্কলিত এ বাজেট সর্বকালের সর্ববৃহৎ। সর্ববৃহৎ এ ব্যয়ের চাপ মেটাতে প্রাক্কলিত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক্কলিত আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। করব্যতীত রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে গত ৩১ মার্চ শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে এক মতবিনিময় সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট আগামী ১৩ জুন (বৃহস্পতিবার) ঘোষণা করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন-২০১২ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপাচাপিতে করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এবার তা বাস্তবায়ন করা হবে। কেননা রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো দেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। অথচ আমাদের মাত্র ১০ শতাংশ। এ জন্যই সবাইকেই ভ্যাট দিতে হবে। তাহলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
তিনি বলেন, নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। এতে ভ্যাটের স্তর হবে তিনটি। যাকে বহুস্তর ভ্যাটব্যবস্থা বলা হয়। এতে ব্যবসায়ীরাও সম্মতি দিয়েছেন। আইনে ভ্যাটের স্তরগুলো হবে ৫, সাড়ে ৭ এবং ১০ শতাংশ।
এমইউএইচ/বিএ