সুবিধা দেয়ায় ঋণ খেলাপিরা উৎসাহিত হবে : সিপিডি
খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া সুবিধার ফলে ঋণ খেলাপিরা ও দুর্বল ব্যাংক উৎসাহিত হবে এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারল্য সংকট দেখা দেবে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বর্তমান সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার সিপিডি আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
সম্প্রতি খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়ে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই চিঠিতে বলা হয়েছে, সব ধরনের চলতি ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, ফিক্সড টার্ম লোন অথবা যেকোনো ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি, কিন্তু ৯ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ হিসেবে হিসাবায়ন করা হবে। ৯ মাসের বেশি কিন্তু ১২ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ হবে। আর ১২ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ মন্দ ঋণ হবে।
আগে তিন মাসের বেশি অনাদায়ী থাকলে সাব-স্ট্যান্ডার্ড গণনা করা হতো। ৬ মাসের বেশি ৯ মাসের কম অনাদায়ী ঋণকে ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ বলা হতো। আর ৯ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ মন্দ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হতো।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা অর্থনীতির মূল স্তম্ভ। আমরা অতীতে দেখেছি, বড় বড় উদ্যোক্তদের অর্থ জোগানের ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থার একটা ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখন আমরা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি ঋণ খেলাপি এটা একটা সমস্যা তা সবাই স্বীকার করছে। সরকারও স্বীকার করছে, যার ফলে আমরা দেখছি নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কীভাবে এটা ( খেলাপি ঋণ) কমানো যায়।
‘কিন্তু দুঃখজনক হলো সত্যিকার অর্থে ঋণ খেলাপি না কমিয়ে, সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে এটা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যার ফলে আমরা গুড প্রাকটিস থেকে ব্যাড প্রাকটিস চলে যাচ্ছি। সুবিধা দেয়ার ফলে ঋণ খেলাপিরা উৎসাহিত হবে। সেইসঙ্গে দুর্বল ব্যাংকও উৎসাহিত হবে। তার ফলে তারল্যের ওপর প্রভাব পড়বে’ বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।
তারল্যের ওপর প্রভাব পড়ার কারণে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ সংকট দেখা দেবে এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের জন্য যখন ব্যাংকের কাছে অর্থ চাওয়া হবে, তখন ব্যাংক যদি অর্থ দিতে না পারে তাহেল আমাদের বিনিয়োগ এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে।’
ফাহমিদা বলেন, আমরা মনে করি খেলাপি ঋণের বিষয়ে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার ফলে আমরা উল্টো দিকে যাচ্ছি। এর ফলে ব্যাংকের প্রকৃত যে স্বাস্থ্য তা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। এটা ভাসা ভাসা একটা সমাধান।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা একটি ব্যাংক কমিশনের কথা বলেছিলাম। আমরা সেটার জন্য কাজ করছি। সরকারের কাছে আমরা বার বার ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলেছি। কিন্তু তারা এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন আমরা শুধু ব্যাংকিং কমিশন নয়, নাগরিকদের নিয়েও কমিশনের চিন্তাভাবনা করছি।
এর আগে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এ সময় খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান সরকারের ১০০ দিনে ব্যাংক খাতের কোনো উন্নয়ন আমরা দেখছি না। সরকারের পক্ষ থেকে ভালো ঋণ গ্রহীতাদের ছাড় দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কারা ভালো ঋণ গ্রহীতা সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা আসেনি। এটা নির্দিষ্ট করা উচিত। তা না হলে এর ফলে সুযোগ নেয়া হবে এবং অর্থনীতির জন্য কোনো লাভ হবে না।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন- সিপিডি সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
এমএএস/জেএইচ/জেআইএম