শবে বরাত ও রমজানের মজুত পুড়ে ছাই
২১ এপ্রিল শবে বরাত। এর ১৫ দিন পরই রমজান মাস শুরু। এই দুই উপলক্ষ ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারকে সামনে রেখে মালিবাগ রেলগেট কাঁচাবাজারের প্রায় সব দোকানেই মজুত ছিল পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্যের। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ভোরে আগুনে পুড়ে গেছে সব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হতাশ ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকার চিত্র।
কেউ দোকানের বাইরে বসে কাঁদছেন, কেউ পুড়ে যাওয়া মালামাল নিয়ে বসে আছেন, কেউ আবার পোড়া মালের ধ্বংসস্তূপ থেকে ভালো মালামাল খুঁজে বের করছেন।
আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানের পাশে বড় ভাইকে জড়িয়ে কাঁদছেন গরম মসলা ব্যবসায়ী মালেক। তিনি জানান, শুক্রবার ও শবে বরাত উপলক্ষে তার দোকানে মাল বেশি ছিল। আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার কম হবে না। আগুনে গরম মসলা তো পুড়ছেই, এছাড়া দোকানের সাটার, কাঠের তাক এবং ক্যাশবাক্সও পুড়ে গেছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছেন তিনি।
চাল ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, আমার দোকানে ২৫ লাখ টাকার চাল ছিল। এর মধ্যে ৪০-৪৫ বস্তা চাল বাঁচাতে পেরেছি। এগুলোর অধিকাংশই আবার পানিতে ভিজে গেছে।
কাঁচাবাজারের চারটি মুদি দোকানের মালিক নাদিম আলী। আগুনে তার ৩টি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, এই বাজার মধ্যবিত্তদের অনেক পছন্দের ছিল। বাড্ডা-রামপুরা থেকেও অনেকে এখানে এসে বাজার করতেন। রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, এ আশঙ্কায় তিন-চার বছর ধরে ক্রেতারা আগেভাগেই রোজার কেনাকাটা করেন। তাই সবাই অনেক মাল মজুত করেছিলেন। আমাদের সবই পুড়ে গেল। সরকার ঋণ প্রদান বা সাহায্য না করলে আমাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা সারা বছর রমজান মাসে ব্যবসা করার অপেক্ষায় থাকি। এই আগুন আমাদের জন্য অভিশাপ।
কাঁচাবাজারের একটু ভেতরে (কথিত কসাইপট্টি) মৃত ছাগল সামনে রেখে কাঁদছিলেন আমজাদ হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার বেশি মাল থাকে। কারণ শুক্রবার বেশিরভাগ মানুষ বাজার করে। বুধবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে দেড় লাখ টাকার ১৮টি ছাগল এনেছিলাম। সকালে জবাই করার কথা ছিল। কিন্তু এসে দেখি সবগুলো পুড়ে গেছে। একদিনই আমার অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ২৭ মিনিটে আগুন লাগে। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট পরে পর্যায়ক্রমে ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ৬টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুনে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা না গেলেও ছোট-বড় মিলে প্রায় তিন শতাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি দোকানই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এআর/এমএএস/এমবিআর/এমকেএইচ