ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

খেল দেখাচ্ছে রেকিট বেনকিজার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৪৪ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০১৯

ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর পর এবার শেয়ারবাজারে খেল দেখাচ্ছে আর এক বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজার। সার্বিক পুঁজিবাজারে মন্দাভাব থাকলেও প্রতিনিয়ত কোম্পানিটির শেয়ার দাম হুহু করে বাড়ছে। মাত্র ৫ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। এরপরও থামছে না কোম্পানিটির শেয়ার দাম বৃদ্ধির ধারা।

ডেটল, মরটিন, হারপিক, ভ্যানিশ, লাইজল ও ভিটসহ কয়েকটি প্রসাধন পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করা কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৭ সালে। ভালো ব্যবসার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বরাবরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা যেন অতীতের তুলনায় বেশ বেড়েছে। ফলে হু হু করে দাম বেড়ে এখন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার পুঁজিবাজারের সব থেকে দামি শেয়ারে পরিণত হয়েছে।

সোমবার শেয়ারবাজারে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও তার কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি রেকিট বেনকিজারের ওপরে। বরং দিনের লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম আগের দিনের তুলনায় ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা বেড়েছে।

এই দাম বাড়ার ফলে অন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দামের ব্যবধান অনেকটাই আকাশ-পাতাল ব্যবধানের মতো দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা কোম্পানিটির সঙ্গে রেকিট বেনকিজারের শেয়ার দামের পার্থক্য দাঁয়েছে ১ হাজার ৬৮৫ টাকা।

কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা গত অক্টোবর থেকেই রয়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণা কেন্দ্র করে প্রায় পাঁচ মাস ধরে কোম্পানিটির শেয়ার দাম অনেকটা টানা বেড়েছে। তবে সম্প্রতি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশের লভ্যাংশ ঘোষণার পর রেকিট বেনকিজারের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির পালে নতুন করে হাওয়া লাগে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১০ অক্টোবর রেকিট বেনকিজারের শেয়ার দাম ছিল ১ হাজার ৬৭৬ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে কয়েক ধাপে বেড়ে ১১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়ায় ২ হাজার ৮০৪ টাকায়। আর ১২ মার্চ ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশের লভ্যাংশ ঘোষণার সংবাদ আসার পর ওই দিনই রেকিট বেনকিজারের শেয়ার দাম বাড়ে ১৪০ টাকা। পরের দু’দিন দাম বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মাত্র তিন কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ৪৪২ টাকা।

অবশ্য ওই দাম বাড়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি ওষুধ ও রসায়ন খাতের এই বহুজাতিক কোম্পানিটি। বরং সময় যত গড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম ততো বাড়ছে। ৮ এপ্রিল লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ পাঁচ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৮০৭ টাকা ৬০ পয়সা বা ১০৮ শতাংশ।

সে হিসাবে পাঁচ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যভাবে বললে একজন বিনিয়োগকারী ১০ অক্টোবার প্রতিষ্ঠানটির ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনলে বর্তমানে সেই শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ২০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা পাঁচ মাস খাটিয়ে মুনাফা হয়েছে ১০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। যে কয়টি তালিকাভুক্ত তার বড় অংশেরই পরিশোধিত মূলধন খুবই কম। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘদিনেও এসব কোম্পানি মূলধন বাড়ায়নি। ফলে শেয়ারের সংখ্যাও কম। অবার স্বল্প সংখ্যক শেয়ারের মধ্যে সিংহভাগই রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চাইলেও এসব কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারেন না। রেকিট বেনকিজার তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান।

বহুজাতিক এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা যেমন কম, তেমনি নিয়তিম ভালো পারফর্মেন্স করছে এবং শেয়ারহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দিচ্ছে। যে কারণে শেয়ারের অনেক দাম হওয়ার পরও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এসব কোম্পানির দিকে ঝুঁকছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠান রেকিট বেনকিজার ২০১৭ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগের বছর ২০১৬ সালে ৭৭৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় এই প্রতিষ্ঠানটি।

নিয়মিত এমন বড় লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ মাত্র ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ৪৭ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। সে হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের বড় লভ্যাংশ দিলেও তার সিংহভাগই নিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা।

অপরদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ১২ শতাশ ও বিদেশিদের কাছে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বাকি ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে।

এমএএস/এসএইচএস/এমএস

আরও পড়ুন