ব্যাটবিসি ছুটছেই
শেয়াহোল্ডারদের বড় লভ্যাংশ দেয়ায় এবং অনুমোদিত মূলধন বাড়িয়ে সাতগুণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (ব্যাটবিসি) শেয়ার দামের পালে হওয়া লেগেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেই কোম্পানিটির শেয়ারের চাহিদা বেশ বেড়েছে। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজার মন্দাভাব দেখা দিলেও কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গত দুই মাসে তালিকাভুক্ত তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশের উপরে দাম কমেছে প্রায় ২০০টি প্রতিষ্ঠানের। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের এমন পতনের মধ্যেই গত দুই মাসে ব্যাটবিসির শেয়ার দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশের উপরে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ছে। তবে ১২ মার্চ বড় লভ্যাংশ ও মূলধন বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর শেয়ার দামে বড় উলম্ফন হয়। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় কোম্পানির শেয়ার দাম।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৩ হাজার ৩৯৮ টাকা ৫০ পয়সা। যা অনেকটা টানা বেড়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৪৯ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ৫৫১ টাকা।
এরপর ১২ মার্চ সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে লভ্যাংশ হিসেবে ব্যাটবিসির ৫০০ শতাংশ নগদ ও ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার এবং অনুমোদিত মূলধন অনুমোদিত ৬০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ কোটি টাকা করার ঘোষণা আসে।
এমন বড় ঘোষণা আসায় ডিএসইতে ওইদিন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয় ৫ হাজার ১০০ টাকায়। এরপর তা আরও বেড়ে এক পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় উঠে যায়। অর্থাৎ এক লাফে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ১ হাজার ৫৫১ টাকা।
লেনদেনের শেষ পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার দামের এই উলম্ফন না টিকলেও আগের দিনের তুলনায় শেয়ার দাম ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৫৮০ টাকায় দাঁড়ায়। এরপর তা বাড়তে বাড়তে ১৮ মার্চ ৪ হাজার ৯০৪ টাকা ২০ পয়সায় ওঠে।
তবে সার্বিক শেয়ারবাজারে টানা মূল্য সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেন খরা দেখা দেয়ায় ১৯ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দাম টানা কমে। এ টানা দরপতনে ব্যাটসিসির শেয়ার দাম সাড়ে ৪০০ টাকার উপরে কমে যায়। অবশ্য রোববার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম বৃদ্ধির ধারা আবার দেখা গেছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে প্রায় ৩৭ টাকা।
লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এর আগেও কোম্পানির শেয়ার দাম বৃদ্ধির ধারা দেখা গেছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ৬০০ শতংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এ লভ্যাংশ ঘোষণা আসার আগে প্রতিটি শেয়ারের দাম এক হাজার টাকার উপরে বাড়ে।
মাত্র ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিটির শেয়ার দাম এমন হু হু করে বাড়লেও তা স্বাভাবিক মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, ব্যাটবিসির ৫০০ শতাংশ নগদ ও ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ বিরাট বড় ঘোষণা। বিশেষ করে ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।
সাইফুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘বোনাস লভ্যাংশের কারণে রেকর্ড ডেটের দিন যাদের কাছে কোম্পানিটির একটি শেয়ার থাকবে তারা তিনটি শেয়ারের মালিক হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে রেকর্ড ডেটের পর যদি ব্যাটবিসির শেয়ার দাম ২ হাজার টাকায় দাঁড়ায়, তাতেও বর্তমানের একটি শেয়ারের দাম ৬ হাজার টাকার সমান হয়ে যাবে। আর ব্যাটবিসি যে মানের কোম্পানি তাতে রেকর্ড ডেটের পরদিন শেয়ার দাম যতই কমে যাক কিছুদিনের মধ্যেই ২ হাজার টাকা ছাড়িযে যাবে।’
লভ্যাংশের বিষয়ে ব্যাটবিসির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। একইদিন মূলধন বাড়ানোর বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে অতিরিক্ত সাধারণ সভা (ইজিএমের) করবে প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ এপ্রিল। অর্থাৎ আর মাত্র ৪ কার্যদিবস শেয়ার ধরে রাখলেই প্রতিষ্ঠানটির ঘোষিত লভ্যাংশ পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) কোম্পাটির প্রায় ৬ লাখ শেয়ার নতুন করে কিনেছে বিদেশিরা। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ১৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে।
দামের দিক থেকে শেয়ারবাজারের সব থেকে দামি এ কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি। এর মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতেই রয়েছে ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে মাত্র দশমিক ৬৮ শতাংশ। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং সরকারের কাছে দশমিক ৬৪ শতাংশ আছে।
এমএএস/এনডিএস/জেআইএম